[email protected] শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূসের পদত্যাগের ভাবনা নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন


প্রকাশিত: ২৪ মে ২০২৫ ৮:১৫ পিএম

ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক অচলাবস্থায় হতাশা প্রকাশ করে পদত্যাগের ইচ্ছা জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হচ্ছে না এবং যথাযথভাবে কাজ করতে না পারলে পদে থাকার কোনো অর্থ নেই।

এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস শনিবার (২৪ মে) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল: "নির্বাচন নিয়ে চাপের মুখে অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি"

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে উদ্ভূত একটি আদর্শিক গণআন্দোলনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, তা অনেকের চোখে অধরা থেকে গেছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী প্রশাসন সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিলম্ব এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা জনমনে হতাশা সৃষ্টি করেছে।

নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ হিসেবে ড. ইউনূসকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাব্য রূপকার হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু এখন তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সেনাবাহিনীর চাপের কারণে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ও সীমাবদ্ধ মনে করছেন।

প্রধান উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে যে ধরনের বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে, তা ড. ইউনূসের নীতিনির্ধারণে সংশয় সৃষ্টি করেছে। অনেকেই তার নেতৃত্বকে ধীরগতির বলে মনে করছেন।

গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে ড. ইউনূস সাফ জানিয়ে দেন, যদি তিনি প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সহায়তা না পান, তবে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন। তিনি পদত্যাগপত্রের একটি খসড়াও প্রস্তুত করেছেন বলে জানিয়েছেন এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। পরে উপদেষ্টারা তাকে বোঝান, তার এই সিদ্ধান্ত দেশের জন্য আরও অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্য—"এই বছরই নির্বাচন হওয়া উচিত"—ড. ইউনূসের জন্য চাপের অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়ায়। এই বক্তব্য তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে এবং তার পরিকল্পনায় বাধা হিসেবে দেখা দেয়।

ড. ইউনূস পূর্বে বলেছিলেন, ২০২৬ সালের জুন নাগাদ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব, তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ তিনি উল্লেখ করেননি। তার মতে, বর্তমানে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি।

অন্যদিকে বিএনপি দাবি করেছে, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের আগে জনগণের গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট নিশ্চিত করা জরুরি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর তারা মনে করছে, এখন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময়।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ড. ইউনূস রাজনৈতিক বিভক্তি, রাস্তা অবরোধ, সংস্কার উদ্যোগের স্থবিরতা এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে অসহযোগিতার অভিযোগ তোলেন। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি থাকলে কী হবে—যদি কোনো সংস্কারই না হয়?”

ওইদিন সন্ধ্যায় যমুনা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন, ড. ইউনূস সত্যিই পদত্যাগের বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করছেন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর