কাশ্মীরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এরই মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দিয়েছেন—ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো নদীর পানি আর পাকিস্তানে যাবে না। বৃহস্পতিবার রাজস্থানের এক জনসভায় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন। খবর রয়টার্সের।
প্রসঙ্গত, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তির আওতায় ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি নদীর পানি পাকিস্তানে প্রবাহিত হয়। এই পানির ওপর নির্ভর করে পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমি। কিন্তু গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পর্যটকদের ওপর সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলার পর ভারত এ চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তায় ওই হামলা চালানো হয়েছে, যদিও ইসলামাবাদ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। হামলার পর দুই দেশের মধ্যে শুরু হয় কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম তীব্র সামরিক উত্তেজনা, যা ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সাময়িকভাবে প্রশমিত হয়।
রাজস্থানের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, “প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার মূল্য পাকিস্তানকে দিতে হবে। এই মূল্য তাদের সেনাবাহিনী ও অর্থনীতির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে।”
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ডাচ সংবাদমাধ্যম এনওএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “সামরিক অভিযান এখনো চলছে। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে—যদি আরেকটি ২২ এপ্রিলের মতো হামলা হয়, তবে জবাব আরও কঠোর হবে। সন্ত্রাসীরা যেখানে থাকবে, সেখানেই আঘাত করা হবে—হোক সেটা পাকিস্তানের ভেতরেই।”
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত মোদি ও জয়শঙ্করের বক্তব্যের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের ফলে তাৎক্ষণিকভাবে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের পর থেকেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে বৈরিতা প্রকট। দুই দেশ এখন পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ করেছে, যার মধ্যে দুটি সংঘটিত হয়েছে কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে। ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, পাকিস্তান কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দিয়ে থাকে—যদিও পাকিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বর্তমান উত্তেজনাপূর্ণ প্রেক্ষাপটে সীমান্ত বাণিজ্য স্থগিত, ভিসা কার্যক্রম বন্ধ এবং কূটনৈতিক তৎপরতায় স্থবিরতা—সব মিলিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: