[email protected] শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লন্ডনে পাকিস্তান হাইকমিশনে হামলা: শাহবাজ শরীফের প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ৭:৫৬ পিএম

ফাইল  ছবি

সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে যুক্তরাজ্যেও।

কাশ্মীর ইস্যুতে চলমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যেই লন্ডনে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায় এবং সাদা দেয়াল ও নামফলকে গেরুয়া রঙের পেইন্ট ছিটিয়ে দেওয়া হয়।

ঘটনার আগের দিন শত শত ভারতীয় বিক্ষোভকারী পাকিস্তান হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। সেই বিক্ষোভ চলাকালে সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের সমর্থক বিক্ষোভকারীরাও উপস্থিত ছিলেন এবং কাশ্মীরে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এছাড়া তারা ২০১৯ সালে পাকিস্তানের হাতে আটক ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন বর্তমানের ছবি এবং ‘চা ও কাপ’-এর প্রতীকী চিত্রও প্রদর্শন করেন, যা পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ‘অপারেশন সুইফট রিটোর্ট’-এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

ব্রিটেনে ভারতীয় ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কমিউনিটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে বিভাজন বিদ্যমান। কাশ্মীর ইস্যু এবং সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মতো বিষয়গুলো যখন উপমহাদেশে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তখন এর প্রভাব প্রবাসী কমিউনিটিগুলোর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। লন্ডনের সাম্প্রতিক হামলা দেখিয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন এখন আর শুধু উপমহাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা বিশ্বব্যাপী প্রবাসী সমাজেও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি তৈরি করছে, বিশেষ করে যখন উভয় পক্ষ রাজপথে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে নামে এবং পরিস্থিতি কখনো কখনো সহিংসতায় রূপ নেয়।

এদিকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের পাকিস্তান হাইকমিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল। ১৯৬১ সালের ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনস’-এর ২২ নম্বর অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “গৃহীত রাষ্ট্রের বিশেষ দায়িত্ব হলো মিশনের চৌহদ্দি রক্ষায় সব ধরনের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং মিশনের মর্যাদা ও শান্তি রক্ষায় ভূমিকা রাখা।”

ফলে প্রশ্ন উঠছে, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কি যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল? কেন এমন একটি স্পর্শকাতর স্থানে সম্পত্তি নষ্ট হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো? এই ঘটনা যুক্তরাজ্যের জন্য শুধু পাকিস্তান নয়, সব বিদেশি মিশনের নিরাপত্তা প্রশ্নেও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ‘নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য’ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে যেকোনো তদন্ত প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের প্রস্তাবও দিয়েছেন।

এদিকে, শুক্রবার পাকিস্তানের সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করে পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র আছে বলে ভারতের যে অভিযোগ, তা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর