ইরানে নারীদের জন্য হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক। সরকারি বিধান অনুযায়ী, জনসমাগমে হিজাব না পরলে গ্রেপ্তারসহ কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।
সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ইরান এখন হিজাব আইন বাস্তবায়নে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যার মধ্যে রয়েছে ড্রোন নজরদারি, ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম এবং একটি বিশেষ মোবাইল অ্যাপ।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তেহরানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রোনের মাধ্যমে নারীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এছাড়া, ‘নাজার’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে সাধারণ নাগরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হিজাব না পরা নারীদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করছেন।
এই অ্যাপ ব্যবহার করে যে কেউ হিজাব ছাড়া কাউকে দেখলে তার গাড়ির লাইসেন্স প্লেট, অবস্থান ও সময়সংক্রান্ত তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট গাড়ির মালিককে পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়, যেখানে জানানো হয়, ‘আপনার গাড়িতে হিজাব আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়ম মানা না হলে গাড়ি জব্দ করা হবে।’
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই নজরদারির পরিধি আরও বাড়ানো হয়। অ্যাম্বুলেন্স, ট্যাক্সি ও গণপরিবহনেও এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের এই কড়াকড়ি নারীদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হচ্ছে।
তবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাপক অভ্যন্তরীণ বিতর্কের পর ইরানের হিজাব আইন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আইনটি পুনরায় কার্যকর হলে এর লঙ্ঘনের শাস্তি হতে পারে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১২,০০০ ডলার জরিমানা। এমনকি, ইসলামিক দণ্ডবিধির ২৮৬ ধারা অনুযায়ী, ‘অনৈতিকতার’ অভিযোগে অভিযুক্ত নারীরা মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখিও হতে পারেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে মাহশা আমিনি নামে এক তরুণী হিজাব আইন ভঙ্গের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর পুলিশের হেফাজতে মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুর পর ইরানে ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বহু মানুষ নিহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ইরানে হিজাববিরোধী প্রতিবাদের ঢেউ ওঠে, যা এখনো প্রভাব বিস্তার করছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: