[email protected] মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
১৬ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সমুদ্রপথ পুনরায় চালু, ভারতের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০৯ পিএম

দীর্ঘ পাঁচ দশক পর সরাসরি সমুদ্রপথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) করাচি থেকে একটি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর মাধ্যমে এ যোগাযোগ পুনরায় চালু হয়।

নতুন এই সমুদ্রপথ বাণিজ্যিক সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করলেও এটি নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

দীর্ঘ বিরতির অবসান

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর এই প্রথমবার পাকিস্তানের কোনো জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। করাচি থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো জাহাজটি ৩০০টি কনটেইনার নিয়ে আসে।

পাকিস্তানের বাংলাদেশস্থ হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এটিকে "দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক" হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তিনি বলেছেন, এই রুট দুই দেশের সরবরাহ শৃঙ্খল সহজ করবে এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সময় সাশ্রয় হবে।

ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পাকিস্তানি জাহাজের যাতায়াত ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা প্রশ্ন তৈরি করেছে। ভারতের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরাসরি এই সমুদ্রপথ ব্যবহার করে চোরাচালানের আশঙ্কা রয়েছে।

২০০৪ সালের চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র জব্দের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ ধরনের যোগাযোগ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইকে অস্ত্র বা মাদক চোরাচালানের সুযোগ করে দিতে পারে।

ওই সময় জব্দ হওয়া চীনা অস্ত্রের চালান ভারতের আসামের বিদ্রোহী সংগঠন উলফার কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল।

কূটনৈতিক পরিবর্তন

নতুন সমুদ্র যোগাযোগকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাণিজ্য ও সামরিক সহযোগিতা

এই রুট চালুর মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে তুলা ও অন্যান্য পণ্য বাংলাদেশে আমদানি হবে এবং বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানি হবে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্পর্ক এতই শক্তিশালী যে পাকিস্তান এই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না।

এছাড়া, বাংলাদেশ নৌবাহিনী ২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ‘আমান’ নৌ-মহড়ায় অংশ নেবে বলে জানা গেছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি একটি যুদ্ধজাহাজও পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব

চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। এটি মিয়ানমার ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। পাকিস্তানি জাহাজের নিয়মিত উপস্থিতি এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ভারতের করণীয়

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সমুদ্র যোগাযোগ ভারতের জন্য নতুন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতকে এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এই সমুদ্রপথ পুনরায় চালু হওয়া বাণিজ্যিক দিক থেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে বাংলাদেশ এই নতুন সংযোগকে কীভাবে ব্যবহার করবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর