চুয়াডাঙ্গায় শীতজনিত রোগীর চাপ বাড়ছে: শিশুদের মধ্যে
নিউমোনিয়া–ডায়রিয়ার প্রকোপ উদ্বেগজনক
চুয়াডাঙ্গায় আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে স্বাস্থ্যখাতে। হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস ও রোটা ভাইরাসের সক্রিয়তায় সদর হাসপাতালে শিশু রোগীসহ সব বয়সী রোগীর ভিড় প্রতিদিনই বাড়ছে। ওয়ার্ডে জায়গা কমে আসছে, আর বহির্বিভাগেও দেখা যাচ্ছে চিকিৎসা–নিবন্ধনের দীর্ঘ সারি।
চিকিৎসকেরা বলছেন—পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়; তবে পরিবারের সচেতনতা এখন সবচেয়ে জরুরি।
দুই নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দু’জন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
আলমডাঙ্গার আইলহাঁস গ্রামের শাহানাজ (২ দিন বয়স) ৩ নভেম্বর ভর্তি হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়।
একই উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের সালমা (১ দিন বয়স) ৯ নভেম্বর ভর্তি হওয়ার পর পরদিন দুপুরে মৃত্যু হয়।
১৬ দিনে ৫৪৮ জন ভর্তি, বেশিরভাগই শিশু
সদর হাসপাতালের তথ্য অনুসারে, ১–১৬ নভেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৪৮ জন রোগী।
এর মধ্যে ৩৬৩ জন শিশু, বেশিরভাগই নিউমোনিয়া আক্রান্ত।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ১৮৫ জন নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়—এসময়ে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া বেড়েছে কয়েকগুণ, একই সঙ্গে ঠান্ডায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
দিনে গরম–রাতে ঠান্ডা: শিশুদের ঝুঁকি বেশি
চিকিৎসকদের মতে, তাপমাত্রার আকস্মিক ওঠানামায় ছোট শিশুদের শ্বাসতন্ত্র দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিনই শতাধিক রোগী ঠান্ডা, কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুল হক মালিক খোকন জানান,
“দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা—এমন আবহাওয়ায় ছোট শিশুরা বেশি অসুস্থ হচ্ছে। নিউমোনিয়া দ্রুত জটিল হয়, তাই সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন গড়ে ৪০–৫০ রোগী ভর্তি হচ্ছে, আর দুই শিশু বিশেষজ্ঞ মিলে আউটডোরে ৩০০–৪০০ রোগী দেখা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “মায়ের দুধ, উষ্ণ কাপড়, আর সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেই হাসপাতালে আনার পরামর্শ দিচ্ছি।”
অভিভাবকদের অভিজ্ঞতা
হানুরবাড়াদি গ্রামের মিরাজ ইসলাম জানান, “ছেলের সর্দি–জ্বর থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ডাক্তাররা নিউমোনিয়া বলেছেন। সাত দিন ধরে ভর্তি আছে।”
মৌসুমি খাতুন বলেন, “আমার চার বছরের বাচ্চা তিন দিন ধরে ডায়রিয়ায় কষ্ট পাচ্ছে। চিকিৎসা ভালোই পাচ্ছি।”
রাব্বি নামের এক বাবা জানান, “মেয়ের কাশি–শ্বাসকষ্ট বাড়ছিল। হাসপাতালে আনার পর ডাক্তাররা নিউমোনিয়া শনাক্ত করেছেন। এখন অক্সিজেন চলছে।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সতর্কতা
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস জানান,
“চুয়াডাঙ্গায় শীত দ্রুত নেমে আসে। ফলে শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত রোগের সংখ্যা এখন বাড়ছে। শিশুসহ সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এই সময়ে পরিবারগুলোকে বেশি সচেতন থাকতে হবে।”
এসআর
মন্তব্য করুন: