[email protected] শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
১৯ আশ্বিন ১৪৩২

বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপে বছরে কোটি মানুষের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০২৫ ১১:২৮ এএম

সংগৃহীত ছবি

বিশ্বব্যাপী উচ্চ রক্তচাপ এখন এক নীরব ঘাতক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন (১৪০ কোটি) মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত জটিলতায় ভুগছেন।

এর মধ্যে মাত্র প্রতি পাঁচজনে একজন নিয়মিত চিকিৎসা নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন।

ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন, উচ্চ রক্তচাপের কারণে প্রতি ঘণ্টায় স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকে এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। অথচ এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য। রাজনৈতিক অঙ্গীকার, বাড়তি বিনিয়োগ ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত করলে লাখো জীবন বাঁচানো সম্ভব।

ডব্লিউএইচও, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিজ ও রিসলভ টু সেভ লাইভস যৌথভাবে জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। এতে বলা হয়—

  • ২০১১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ মোকাবিলায় ব্যয় করেছে ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা তাদের সম্মিলিত জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ।
  • উচ্চ রক্তচাপ হলো হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, কিডনি রোগ ও ডিমেনশিয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।
  • সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে কোটি মানুষ অকালে মারা যাবে এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি বাড়তে থাকবে।

ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিজের জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান ড. কেলি হেনিং বলেন, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধযোগ্য ও চিকিৎসাযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রতি বছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। সচেতনতা, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি ও শক্তিশালী নীতিমালা ছাড়া মৃত্যুহার কমানো কঠিন।

১৯৫টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে—

  • ৯৯টি দেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার ২০ শতাংশের নিচে।
  • আক্রান্তদের অধিকাংশ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বাস করেন।
  • বড় বাধাগুলো হলো:
    • দুর্বল স্বাস্থ্যনীতি (তামাক, অ্যালকোহল, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, লবণ ও ট্রান্স ফ্যাট)
    • মানসম্মত চিকিৎসা প্রোটোকলের অভাব
    • ব্যয়বহুল ওষুধ ও সীমিত প্রাপ্যতা
    • প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব
  • নিম্ন আয়ের ২৫টি দেশের মধ্যে মাত্র ৭টিতে (২৮%) ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত সব রক্তচাপের ওষুধ সহজলভ্য।
  • ‘রেজলভ টু সেভ লাইভস’-এর প্রেসিডেন্ট ড. টম ফ্রিডেন বলেন, ওষুধের এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারলে লাখো জীবন বাঁচবে এবং বছরে বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।

সব বাধা সত্ত্বেও অগ্রগতির উদাহরণও রয়েছে—

  • বাংলাদেশ: ২০১৯–২০২৫ সালের মধ্যে কিছু এলাকায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার ১৫% থেকে ৫৬%-এ উন্নীত করেছে। স্ক্রিনিং ও ফলো-আপ বাড়ানো এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় উচ্চ রক্তচাপকে অন্তর্ভুক্ত করাই এ সাফল্যের কারণ।
  • দক্ষিণ কোরিয়া: কম খরচে ওষুধ ও সীমিত চিকিৎসা ফি নির্ধারণ করে জাতীয়ভাবে অগ্রগতি এনেছে।
  • ফিলিপাইন: প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ব্যবস্থাপনাকে একীভূত করেছে।

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সুপারিশকৃত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে লাখ লাখ অকাল মৃত্যু রোধ এবং সামাজিক–অর্থনৈতিক ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর