সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে কয়েকটি বিষয়কে ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সম্পর্ক বিজ্ঞানীরা। চলুন জানা যাক।
কেমন মানুষের সঙ্গে ঘর বাঁধবেন, কেমন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবেন; এই নিয়ে আপনার একটি নিজস্ব ভাবনা আছে। সবারই থাকে। আমরা মনে মনে সেই মানুষটিকে এমন কল্পনা করি যে বাস্তবে তেমন মানুষ পাওয়া অসম্ভব। কেননা সম্পর্কে স্বাতন্ত্র্য রক্ষার বিষয়টি জড়িত। তাই কারও পুরোপুরি মনের মতো হতে পারে না, সম্ভবও না। সুতরাং কাছের মানুষটিকে ভালোবাসুন। নিজেদের সম্পর্ক আরও মজবুত করতে আরও কী করা প্রয়োজন- নিজেকে এই প্রশ্নটি করুন। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে কয়েকটি বিষয়কে ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সম্পর্ক বিজ্ঞানীরা। চলুন জানা যাক।
ঝগড়া-সংঘাত-বিবাদ ভয় পাবেন না: সম্পর্কে ঝগড়া বিবাদ হবে, আপনি কীভাবে ওই পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন সেটাই আসল কথা। নিজের স্বাতন্ত্র্যকে প্রকাশ করতে গেলে কিছু মতপার্থক্য হতেই পারে। কিন্তু বন্ধুত্ব বা সম্পর্কের মধ্যে এরকম সংঘাত খুব স্বাভাবিক। মাঝে মধ্যে এর প্রভাব খুব ইতিবাচক হয়। ঝগড়া বিবাদ দুইজনের মধ্যেকার ভিন্নতা সম্পর্ককে আরো মজবুত করে।
তার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন: সম্পর্কে একে অন্যের অনুভূতি বোঝা জরুরি। যাকে বলে এমপ্যাথি -এবং বিশেষজ্ঞদের কথায়, এটা সংঘাত নিষ্পত্তির জন্য সবচেয়ে জরুরি জিনিস। অন্যজন কি ভুল করছে সেটা না ভেবে বরং নিজেকে প্রশ্ন করুন: আমি কি ভুল করছি এবং আমি কীভাবে নিজেকে বদলাতে পারি?
নিজের ইচ্ছার যত্ন নিন: সম্পর্কে একে অন্যের প্রতি খুব নির্ভরশীল হয়ে পরবেন না। কিছু সময় আলাদা কাটান। এতে যে সময়টুকু দুইজন একসঙ্গে কাটাবেন ওই সময়টুকু মধুর মনে হবে। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ রাবাই হার্ভে বিলভস্কি বলছেন, কিছু সময় আলাদা থাকার অর্থ একে অপরকে এড়িয়ে চলা নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর এবং পরিণত সম্পর্ক গড়ে তোলা।
দুইজনে মিলে আনন্দ করুন: একে অন্যের সঙ্গ উপভোগ করার জন্য উপায় খুঁজে বের করুন। ধরুন, মাসের কোনো একটি সময়ে দুজন বেড়াতে বের হওয়া। দুইজনের যোগাযোগ হতে হবে স্পষ্ট, পরিষ্কার করে জানান আপনি কী বলতে চান। অনেক তর্কাতর্কিই হয় শুধু একটি কারণে- ভুল বোঝাবুঝি। এই বিরক্তি, হতাশা এবং ঝগড়া এড়াতে হলে নিজের যা বলবার - সেই কথাটা পরিষ্কার করে বলুন। একটা এসএমএস বা ইমেইল পাঠানোর আগে আরেকবার পড়ে নিন, আপনি যা বলতে চান তা কি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে? দেখে নিন।
পরিবারের অন্য সদস্যদের গুরুত্ব দিন: আমরা চাই, সে হবে আমার ক্রাচের মতো - আমার সমস্যার সময় আমি যার ওপর ভর করে চলবো। আরো চাই যে 'সে' হবে আমার প্রেমিক, বন্ধু, গোপন কথা বলার মানুষ হবে এবং অর্থনৈতিক নির্ভরতাও দেবে সে। এর কোনো একটাতে সে ব্যর্থ হলেই আমরা পুরো সম্পর্ক নিয়েই হতাশ হয়ে যাই। একজনকে জীবনের সবকিছু বানিয়ে না রেখে এটা বোঝা দরকার কখন আপনি পরিবারের একজনের কাছে যাবেন, কোনো কারণে কাঁদতে হলে কার কাঁধে মাথা রাখবেন। সবকিছুর জন্য জীবনসঙ্গীকে কাজে লাগাবেন - এমন আশা করবেন না।
সুন্দর মুহূর্তগুলো উদযাপন করুন: জীবন সব সময়ই আনন্দের হবে না, বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু যখন আনন্দের সুযোগ আসে, তখন তা উদযাপন করুন ।
নিজের দুশ্চিন্তা, ভয়গুলো শেয়ার করুন: সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে হলে নিজেকে উন্মুক্ত করতে হয়। আপনি যদি আপনার দুর্বলতা, ভয়, দুশ্চিন্তাগুলো তাকে জানতে দেন, তার সহায়তা চান, - তাহলে অন্যজনও তাই করবে।
অন্যের প্রতি দয়া, সহমর্মিতা দেখান: আমরা অনেক সময়ই নিজের প্রিয়জনকে এমনভাবে নিই যেন 'ও তো আছেই' । তা না করে একে স্বীকৃতি দিন, অন্যজনের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করুন। তার প্রতি সদয় হোন, এবং অন্যজন যখন সেটা করছে তখন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
আমাদের অনেক সময় মনে হয় 'আমি কি আমার স্বপ্নের মানুষকে পেয়েছি?' - এরকম ভাবনা আপনাকে হতাশ করতে পারে। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এসথার পেরেল বলছেন, সত্যি কথা হচ্ছে যে আসলে এটা জানা অসম্ভব। আমাদের মনে রাখতে হবে যে স্বপ্নের সেই 'এক এবং অদ্বিতীয়' বলে কেউ নেই।
তথ্যসূত্র: বিবিসি অবলম্বণে
এসআর
মন্তব্য করুন: