news.protidinerbangla22@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৪ আশ্বিন ১৪৩১

প্রকৃতি সেজেছে আগুন ঝড়া কৃষ্ণচূড়ার রঙে

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪ ১:৪৭ পিএম

স্রষ্টার অকৃপন হাতেই এর মনোহারী উপস্থাপনার জন্য আগুনকে রঙে রুপান্তর করে ফুল হয়ে ফুটিয়েছে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে। কৃষ্ণচূড়া জন্মানোর জন্য উষ্ণ বা প্রায়-উষ্ণ আবহাওয়ার দরকার।

এমন কড়া রোদে কৃষ্ণচূড়ার আবীর নিয়ে প্রকৃতি সেজে উঠেছে বর্ণিল রূপে। যেন প্রকৃতিতে কৃষ্ণচূড়ার রঙয়ে আগুন জ্বলছে। এমন গাছের নিচে দাঁড়ালে মনে হয় কোনো রক্তিম বর্ণের উৎসব চলছে। মাথার উপর লাল সবুজের চাদোয়া, পায়ের নিচে ঝরা ফুলের বিছানা। যখন কৃষ্ণচূড়া ফোটে তখন এর রুপে মুগ্ধ হয়ে পথচারীরাও চলার পথে ক্ষণিক থমকে তাকান,বলেছেন মিলন মাহামুদ রবি। যে এদিকে নানা রঙ্গের ফুলের সাজে সেজেছে প্রকৃতি, নাটোর জেলার নলডাঙ্গার পথে- প্রন্তরে চোখ মেললেই দেখা যাবে,আগুন ঝড়া কৃষ্ণচূড়ার সমাহার।এ যেন প্রকৃতির এক চমৎকার রূপ,যেন কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন লেগেছে।

কৃষ্ণচূড়ার ফুল যখন ফুটে এই প্রকৃতির বুকে,তখন সব বাঙ্গালীর হৃদয়ে দোলা দেয়। নাটোরের নলডাঙ্গার পাখিপ্রেমী ও পরিবেশ কর্মী ফজলে রাব্বি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে পাখি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছি। যখন কৃষ্ণচূড়ার গাছে ফুল ফোটে তখন পরিবেশ দেখতে খুব সুন্দর লাগে। তাই আমার ইচ্ছা নলডাঙ্গার প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তার মোড়ে একটি করে কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগানো সেই উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি এবং বেশকিছু কৃষ্ণচূড়ার গাছ লাগিয়েছি। আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নলডাঙ্গা এলাকা কৃষ্ণচূড়ার ফুলে ফুলে ভরে যাবে।
নলডাঙ্গার তরুন কবি, শতক আরিফ লিখেছেন-
"আগুন লেগেছে কৃষ্ণচুড়ায়
ফাগুন কেন দূরে।
সবুজ গাঁয়ে রঙ লেগেছে
পাখি ডাকছে সুরে !
কৃষ্ণচূড়া কৃষ্ণচূড়া
আহা কি চমৎকার,
কি বাহারি দেখতে তুমি
সৌন্দর্য অপার!"
বাংলাদেশ জাতীয় হার্বেরিয়ামের
ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ( প্রেষণ)
ডঃ মাহবুবা সুলতানা বলেন,আগে বেশি গাছ তো ছিলই,কিন্তু-জনসংখ্যার সাথে আবাসন, বাণিজ্যিক, শিল্প ও কৃষি কাজের প্রয়োজনে কাটা হচ্ছে গাছ প্রতিনিয়ত। রাস্তায়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বেসরকারি অফিস গুলোতে বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে কৃষ্ণচূড়া রোপন করা যেতে পারে। সামাজিক বনাঞ্চল, যশোর সার্কেল এর প্রধান বন সংরক্ষক ও জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক পরিচালক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, এখন সময় কৃষ্ণচুড়ার রঙবাহারী রঙের আবীরে মাতোয়ারা হবার। চোখ জুড়ানো আগুনরাঙা প্রকৃতির এই কপোল তিলকের মাধুর্যে মাতোয়ারা হয়নি এমন বাঙালির সন্ধান সম্ভবত পাওয়া যাবেনা।

প্রকৃতিতে কৃষ্ণচুড়ার ফুল ফুটতে দরকার সূর্যালোকের বিশেষ কৌনিক অবস্থান ও তাপমাত্রার সামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থিতি। এই বৃক্ষ শুষ্ক ও লবণাক্ত অবস্থাও সহ্য করতে পারে। কৃষ্ণচুড়ার মুল আবাস মাদাগাস্কার হলেও ক্যারাবিয়ান অঞ্চল, আফ্রিকা, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ চীন, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিশ্বের অনেক দেশে এটি জন্মে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণচূড়া শুধু মাত্র দক্ষিণ ফ্লোরিডা, দক্ষিণ পশ্চিম ফ্লোরিডা, টেক্সাসের রিও গ্রান্ড উপত্যকায় পাওয়া যায়।

 

এছাড়াও কোস্টারিকা, পানামা সহ মধ্যম তাপমাত্রার দেশেও এর উপস্থিতি লক্ষনীয়। ভারত বর্ষে সাধারণত এপ্রিল-জুন সময়কালে কৃষ্ণচূড়া ফুল ফোটে। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোটার সময় ভিন্ন ভিন্ন। কৃষ্ণচূড়া একটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম -Delonix regia । এটি Fabaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যা গুলমোহর নামেও পরিচিত।গ্রীষ্মের খরতাপে দগ্ধ ধরাতলে ক্লান্ত মানবতার মাথায় সুশীতল ছায়া ও নয়নে তীব্র রঙের ঝলকানীতে মুগ্ধকর আবেশ ছড়াতে কৃষ্ণচূড়া ফুল জানান দেয় তার সৌন্দর্যের আগমনী বার্তা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এত সুন্দর একটি ফুল, সবুজের চিরল পাতার আবেশিত আবাহনের সাথে কোথাও কৃষ্ণরঙ বা আচরনের কোন সম্পর্ক না থাকলেও এ ফুলটির নাম কেন হলো কৃষ্ণচুড়া ?

শিক্ষক ও সাংবাদিক ফকির মুক্তা বলেন, বাংলা সাহিত্যের পরেতে পরেতে কৃষ্ণচুড়ার সগর্ব উপস্থিতি ও বাঙ্গালী জীবনে এর প্রভাবই বলে দেয় কৃষ্ণচুড়ার নাম নয় এর রঙ ও রুপের সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমরা, মুগ্ধ মানুষেরা, মুগ্ধ বাঙ্গালীরা।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর