,
★ চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেপায়েত উল্লাহ বহাল তবিয়তে
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর চারিদিকে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। জুলাই-অগাস্টের বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগ বিদায় নিলেও এখানে বহাল তবিয়তে আছেন পতিত সরকারের সুবিধাভোগীরা।
বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রকিব উল্লাহ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কেপায়েত উল্লাহসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তারা চলছেন দাপটের সঙ্গে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে রাতারাতি সুরও বদলে ফেলেছেন এসব কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, অন্তবর্তীকালীন সরকারের একটি মহলকে ‘ম্যানেজ’ করে পরিচালক থেকে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নিয়েছেন রকিব উল্লাহ।
আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সুপারিশে ২০২২ সালে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ বাগিয়ে নেয়া মো. কেপায়েত উল্লাহ এখনো স্বপদে বহাল আছেন।
অথচ তার সময়েই এই বোর্ডে ঘটেছে একের পর এক সনদ জালিয়াতির ঘটনা। কিন্তু অদ্যাবদি তার বিরুদ্ধে কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো এই ঘটনায় জড়িতদের যাতে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয় সেজন্য তিনি কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বোর্ডের কর্মকর্তারা যখন নিজেদের মতো করে সব বাগিয়ে নিচ্ছেন তখন পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ পলিকেটনিক শিক্ষক পরিষদের নেতারাও। সব কিছুই চলে তাদের ইশারায়।
আওয়ামী লীগ আমলে দাপট দেখিয়ে এদের শীর্ষ নেতারা প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পোস্টিং নিয়ে আছেন। গতবছরের ২২ নভেম্বর বোর্ডের মডেল নিয়োগবিধি প্রণয়ন কমিটিতেও এই দুই সংগঠনের দুজন করে সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে সিন্ডিকেটের কারনে দেশে বড় বড় আইটি ফার্ম ও আইটি প্রফেশনাল থাকা সত্তেও বোর্ডের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে প্রেরণের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারটি ভারতের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি 'কনসাল্টিং অটোমেটিক বিডি লিমিটেড' দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যা ভারতে অবস্থিত সার্ভারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
১৯৬৭ সালে স্থাপিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান প্রণয়ন ও নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষা নেয়া ও সনদ প্রদান, নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়া, মূল্যায়ন ও উন্নয়নের সার্বিক দায়িত্ব পালন করে থাকে। বোর্ডের আওতায় বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর, বেসরকারি, এনজিও ও ব্যক্তি উদ্যোগে ১০হাজার ৫০০ টি বিভিন্ন ধরণের কারিকুলাম পরিচালিত হয়।
জানা গেছে, বোর্ডের আওতায় পরিচালিত ২৯ টি কারিকুলামের কোর্স প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পরীক্ষা গ্রহণসহ যাবতীয় একাডেমিক কাজ পরিচালনা করে। কিন্তু এসব কার্যাক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিক্ষক সমিতি ও পরিষদের নেতাদের বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের আস্থাভাজন ছিলেন বলে জানা গেছে।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠনের নেতারা বলছেন, বোর্ডের কোনো কার্যক্রমে তাদের কোনো হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।
পলিটেকনিক শিক্ষকদের পাঠদান বিষয়ক কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই ক্লাস পরিচালনা করার ফলে ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। কিন্তু সেই শিক্ষকদেরই অনেকে প্রেষণে বোর্ডে এসে কারিকুলাম ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের কাজ করছেন।
অভিযোগ আছে, ঢাকায় থাকার পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে পলিটেকনিকের শিক্ষকরা বোর্ডে পদায়ন নেন। যেখানে শিক্ষক সমিতির নেতারা বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। যদিও বোর্ডের নিজস্ব কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ। কিন্তু শিক্ষকরা প্রেষণে এসে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায় বোর্ডের কর্মকর্তারা হয়ে পড়ছেন কোনঠাসা।
অন্যদিকে পলিটেকনিকে শিক্ষক সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ৭০ ভাগ শিক্ষক সংকট আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু শিক্ষক সংগঠনগুলোর সেদিকে নজর নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, সংগঠনের নেতারা এতদিন আওয়ামী লীগের লোক বলে পরিচয় দিয়ে দাপট দেখাতেন। এখন তারা বিএনপি-জামায়াতের লোক বলে প্রচার করছেন। কিন্তু শিক্ষকদের সমস্যার দিকে নজর নেই।
বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মো. খালেদ হোসেন নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি দশবছর ধরে ঢাকা পলিটেকনিকে আছি। এ কারণে আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলা হয়। কিন্তু ১৫ বছর ধরেও তো অনেকে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে তো কেউ কোনো কথা বলছে না।’ যদিও শিক্ষকদের এই পদগুলো বদলিযোগ্য।
বাংলাদেশ পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জি এম আকতার হোসেন বলেন, ‘এগুলো স্রেফ ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ। আমরা বোর্ডের কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান চেয়ারম্যান, সচিব ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অদক্ষতার কারণে সময় মত পরীক্ষা গ্রহনের জন্য প্রয়োজনীয় উত্তরপত্র প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হয়।
প্রয়োজনীয় উত্তরপত্র না থাকায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা দুইবার পিছিয়ে ডিসেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে শুরু করা হয়।
এসএসসি (ভোকেশনাল) নবম শ্রেণীর পরীক্ষা নভেম্বর মাস হতে পিছিয়ে ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ হইতে শুরু করা হয়। তাদের অদক্ষতার কারণে সময় মতো উত্তরপত্র প্রস্তুত করতে না পারায় এই ঘটনা ঘটেছে।
এসএসসি (ভোকেশনাল) ফাইনাল পরীক্ষা আগামী ১০ এপ্রিল ২০২৫ থেকে শুরু হবে কিন্তু এখনো পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উত্তর পত্র প্রস্তুত করা হয় নি বলে জানা গেছে। অভিযোগের বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রকিব উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কে কোথায় দায়িত্ব পালন তা সরকার নির্ধারণ করে দেন। এখানে ব্যক্তিগত চাওয়ার সুযোগ নেই। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। আশ্রয় দেয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কেপায়েত উল্লাহর সঙ্গে কথা বলতে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এসআর
মন্তব্য করুন: