ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। এরপর টানা প্রায় ১৬ বছরে আওয়ামী সরকারের শাসনামলে ব্যাংক খাতে দুর্নীতি ও লুটপাটের নানা চিত্র প্রকাশ পেতে শুরু করে।
দলটির শাসনামলে দ্রুত বাড়তে থাকা কোটিপতিদের সংখ্যা এখন এক ধাক্কায় কমতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সরকারের পতনের পর মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এক হাজার ৬৫৭টি কোটিপতি হিসাব বন্ধ হয়ে গেছে।
এই হিসাবগুলোতে আগে অন্তত এক কোটি টাকা জমা ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী চরম সংকটে পড়েছে। সংসারের ব্যয় মেটাতে অনেকে ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দুর্নীতিতে জড়িত সাবেক এমপি, মন্ত্রী ও নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব এবং জব্দ করায় বিত্তশালীরা ভয়ে ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫টি, যেখানে মোট জমা রয়েছে ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। তবে জুন প্রান্তিকে মোট আমানত ছিল ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ, তিন মাসে আমানতকারীর সংখ্যা বাড়লেও টাকার অঙ্কে আমানতের পরিমাণ কমেছে।
একই সময়ে, এক কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে—এমন হিসাবের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে। এই হিসাবগুলোতে মোট জমা রয়েছে সাত লাখ ৪৬ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। জুন প্রান্তিকে এসব হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি, যেখানে জমা ছিল সাত লাখ ৭৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল মাত্র ৫ জন। সময়ের সাথে এ সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ২০০৮ সালে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ১৬৩ জনে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। তবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার ১২৭টিতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কোটিপতি হিসাবের মধ্যে ব্যক্তির পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠানের নামও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একাধিক ব্যাংক হিসাব খুলতে পারার ফলে প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে হিসাবগুলো কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
দুর্নীতির তদন্ত, অর্থনৈতিক মন্দা এবং আমানতকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট—এসব কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত ও কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা কমছে। ফলে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: