ইউজিসি
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুমোদনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যেত।
এসব প্রতিষ্ঠানে অনুমোদন ও আর্থিক সহায়তা সহজলভ্য ছিল, বিশেষত যখন প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করা হতো। গত ১৫ বছরে, আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় দেড় ডজনেরও বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে, যেগুলোর নাম শেখ হাসিনা কিংবা বঙ্গবন্ধুর নামে রাখা হয়।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর এসব বিতর্কিত নাম পরিবর্তনের দাবি জোরালো হয়। কিছু আইনি জটিলতার কারণে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হলেও, ৩০ অক্টোবর প্রথম দফায় পাঁচটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের নাম সংশোধন করা হয়। এগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার নামে নামকরণ করা হয়েছে। এখনো এক ডজনেরও বেশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোর নামকরণ শেখ পরিবারের সদস্যদের নামে করা হয়েছে। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
সম্প্রতি, ছয়টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ডা. মো. সরোয়ার বারীর স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। পরিবর্তিত নামের তালিকায় মানিকগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ, নোয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ, জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ, টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ অন্তর্ভুক্ত।
অভিযোগ রয়েছে, পূর্ববর্তী ইউজিসি কর্মকর্তারা সুবিধাবাদী চক্রের মাধ্যমে শেখ পরিবারের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। ইউজিসি সূত্র মতে, একই ব্যক্তির নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় নামকরণ সঠিক হয়নি এবং জেলা ভিত্তিক নামকরণ অধিক যৌক্তিক।
১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনার প্রথম সরকার ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। গত ১৫ বছরে বঙ্গবন্ধুর নামে আরও অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়, যেমন: গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১১), ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৩), গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), এবং আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
ইউজিসি’র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একই ব্যক্তির নামে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ বিরক্তিকর এবং বিষয়টি পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নাম থাকার কারণে সেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তার নামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মেরিটাইম, এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস, এবং ডিজিটালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র মতে, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১১), ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৩), গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮), এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৯) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (২০২০), পিরোজপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০২২), এবং নওগাঁয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় (২০২৩) প্রতিষ্ঠিত হয়।
গোপালগঞ্জ ও পিরোজপুরের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই নামকরণ– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়– বিভিন্ন সময়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার নামে জামালপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৭) এবং সিলেটে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় (২০১৮) ও খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (২০২১) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জামালপুর (২০১৪), টাঙ্গাইল (২০১৪) এবং হবিগঞ্জে (২০১৭) শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ নামেও তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ইউজিসি’র সচিব ড. মো. ফখরুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, একই ব্যক্তির নামে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ সত্যিই বিব্রতকর, এবং এটি অতীতে হওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে, এবং এই নামগুলো কিভাবে পরিবর্তন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: