বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঢাকায় একটি কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ।
মঙ্গলবার ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্কের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টার বৈঠকের পর এ তথ্য জানান সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। ঢাকার একটি হোটেলে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “একটি বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখানে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের একটি কার্যালয় চালু হবে। অফিস চালু হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রগুলো তদন্ত করতে পারবে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে দুদিনের সফরে মঙ্গলবার ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার টুর্ক। প্রথম দিনে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আয়োজনে যোগ দেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও একটি বৈঠকের কথা রয়েছে।
বিকালে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ঢাকায় স্থাপিতব্য কার্যালয়টি হবে সপ্তদশ দেশ হিসেবে মানবাধিকার পরিষদের এমন কার্যালয়।
বর্তমানে ১৬টি দেশে এ ধরনের কার্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বুরকিনা ফাসো, কম্বোডিয়া, চাদ, কলম্বিয়া, গুয়াতেমালা, গিনি, হন্ডুরাস, লাইবেরিয়া, মৌরিতানিয়া, মেক্সিকো, নাইজার, ফিলিস্তিন ও সিরিয়া। মানবাধিকার পরিষদ তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, এ ধরনের কার্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে মানবাধিকার সুরক্ষা ও প্রসারে কাজ করা।
ঢাকায় মানবাধিকার পরিষদের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ। তিনি বলেন, “যখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অপরাধের তদন্ত করে, সেই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকে। নাগরিক সমাজ থেকে যখন তদন্ত করা হয়, তখন নির্যাতনের শিকার হতে হয় এবং চাপে থাকতে হয়। জাতিসংঘের কার্যালয় থাকলে মানবাধিকারের জায়গা থেকে আমাদের একটি বড় শক্তি বাড়বে।”
বৈঠকে আলোচনার অন্যান্য বিষয় তুলে ধরে শারমীন মুরশিদ বলেন, “ওরা জানতে চাইল আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং বর্তমান পরিস্থিতি কেমন দেখি। আমরা প্রত্যেকে যার যার ক্ষেত্র থেকে বলেছি, চ্যালেঞ্জগুলো কী এবং কোথায় তারা আমাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।”
মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ফলকার টুর্কের নেতৃত্বে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল। এসময় প্রধান বিচারপতি দেশের বিচার বিভাগের আধুনিকায়নে তার গৃহীত রোডম্যাপের কথা তুলে ধরেন এবং সুশাসন নিশ্চিতকরণে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা ও উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কমিশন গঠনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধান বিচারপতি দেশের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় বিচার বিভাগের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এসআর
মন্তব্য করুন: