[email protected] শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
১৪ পৌষ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তন উপকূলীয় মানুষের মানসিক অসুস্থতা সৃষ্টি করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ মে ২০২৪ ৭:৪০ এএম

‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশ অনুষ্ঠান

জলবায়ু পরিবর্তন এখন জনজীবনে হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলে এই জলবায়ু পরিবর্তন নানান বিপর্যয় সৃষ্টি করে থাকে। যেমন খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদী ভাঙন ইত্যাদি। এসব কারণে উপকূলের মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করছে মানসিক অসুস্থতা। এর মধ্যে রয়েছে গুরুতর দুশ্চিন্তা, বিষন্নতা, মানসিক চাপ মানসিক বৈকল্য এবং ঘুম না হওয়ার মতো জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ুর প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ, সিভিল সোসাইটি প্ল্যাটফর্ম যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করে।

গবেষণায় উঠে এসেছে, উপকূলীয় মানুষের ২৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ উদ্বেগজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বিষন্নতায় ভুগছেন ২২ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মানসিক চাপে আছেন ৪৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। এছাড়া দুর্ঘটনা পরবর্তী মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশের। ৪৩ দশমিক ৯৫ শতাংশের ভালো ঘুম হয় না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ (এনআইএমএইচ)-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ এবং সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ড. ড্যানিয়েল নোভাক।

 

অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। এটা ভালো যে একটা বেসলাইন স্টাডি করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের আরও প্রভাব জানতে এখন আমাদের এসব পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।

ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের একটি সমন্বয়মূলক প্রভাব রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের ব্যক্তিত্বের নানান সমস্যা দেখা যায়। গবেষণা পরিচালনার সময় গবেষকদের বিষয়গত গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ড. ড্যানিয়েল নোভাক টেলিমেডিসিনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্তির কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিপজ্জনক।

 

গবেষণায় উঠে এসেছে, শ্যামনগর এলাকা নিম্নভূমি হওয়ার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, উপকূলীয় বন্যা এবং উপকূলীয় ক্ষয়ক্ষতির মতো প্রাকৃতিক বিপদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভুক্তখোগীরা কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তাও গবেষণায় উঠে এসেছে। তুলে ধরা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের অপ্রতুলতা, সেবাদানকারীদের পেশাদারত্বের ঘাটতি, সীমিত আর্থ-সামাজিক সহায়তা, ওষুধের ঘাটতি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপ্রতুলতা এবং নাগালের বাইরে বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা।

বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে এই অঞ্চলের মানুষ জীবনযাত্রায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন, জীবিকার সীমাবদ্ধতা, উচ্চ অভিবাসনের হার এবং সামাজিক দ্বন্দ্ব। তারা এসব সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করেন। যেমন- ঋণ গ্রহণ, বিকল্প জীবিকা, কবিরাজের কাছ থেকে ওষুধ নেওয়া, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সহায়তা নেওয়া ইত্যাদি।

 
 

গবেষণা প্রতিবেদনে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা বাড়ানো, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা, কাউন্সেলিং ইউনিট স্থাপন এবং ন্যাশনাল আডাপটেশান প্ল্যান (ন্যাপ) এবং জাতীয় স্বাস্থ্য অভিযোজন পরিকল্পনার সঙ্গে একীভূত করা। এছাড়া দুর্বল জনগোষ্ঠীর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, নীতি এবং আইনি কাঠামোর পরিবর্তন এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য স্বাস্থ্য সুবিধা উন্নত করা।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর