রাজধানী ঢাকার বায়ুমান দিন দিন অবনতি ঘটছে, যা থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বায়ুদূষণের বৈশ্বিক তালিকায় প্রায়ই শীর্ষে থাকা ঢাকা এখন একটি উদ্বেগজনক শহরে পরিণত হয়েছে। শহরের বাতাস কখনো ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ আবার কখনো ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
দূষণের ভয়াবহ চিত্র
দূষণবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপসের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুদূষণ ছিল গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোনো দিনই রাজধানীবাসী নির্মল বায়ু উপভোগ করতে পারেনি।
গত ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুর গড় মান ছিল ২৮৮, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২৬ শতাংশ এবং গত ৯ বছরের ডিসেম্বরের গড়ের তুলনায় ৩১ শতাংশ বেশি।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ারের একিউআই সূচকে গতকাল সোমবার ঢাকার স্কোর ছিল ২৫২, যা ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত। আজ মঙ্গলবার সকালে স্কোর ২৩৯-এ পৌঁছেছে, যা এখনো ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে রেখেছে।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মধ্যে মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং (২৮৬), মার্কিন দূতাবাস এলাকা (২৮৩), সাভারের হেমায়েতপুর (২৮০), এবং আগাখান একাডেমি (২৬৭)-তে বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে
বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক রেজাউল করিম বলেন, “দূষিত বায়ুতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাব থাকে। এতে রক্তনালির ক্ষতি হয় এবং হৃদযন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ধমনি শক্ত হয়ে যাওয়া, স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিলতা দেখা দেয়।”
বিশেষ করে বাতাসে অতিক্ষুদ্র ধূলিকণা (পিএম ২.৫)-এর উপস্থিতি হৃদরোগের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। এসব কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে রক্তনালির লেয়ারে ক্ষতি করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ব্যাহত করে।
দূষণের পরোক্ষ প্রভাব
বায়ুদূষণ শুধু শারীরিক নয়, মানসিক চাপও বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঢাকার যানবাহনের শব্দ, নির্মাণকাজের ধুলাবালি, এবং যানজটের কারণে মানুষের মানসিক চাপ ও অস্থিরতা বেড়ে গেছে। মানসিক চাপের এই বাড়তি প্রভাব হৃদযন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
সমাধানের জন্য করণীয়
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে, নির্মাণকাজের ধুলা নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবান্ধব যানবাহনের ব্যবহার, এবং শিল্প-কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের উন্নত পদ্ধতি নিশ্চিত করা। মানুষের জীবন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
এসআর
মন্তব্য করুন: