দেশজুড়ে পেট্রোল ও অকটেনের সঙ্গে অপরিশোধিত কনডেনসেট মেশানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি পেট্রোল পাম্প মালিকরা সহায়তা করছে বিভিন্ন বেসরকারি রিফাইনারি ও ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টে। এতে বছরে সরকার শত কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে যানবাহনের ইঞ্জিন এবং পরিবেশেরও। সম্প্রতি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কিছু বেসরকারি রিফাইনারি কোম্পানি এবং কনডেনসেট উত্তোলনকারীদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ উদ্বেগজনক চিত্রের কথা জানিয়েছে।
বিপিসি চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ‘‘এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’’
এদিকে, অভিযোগ রয়েছে, দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে কনডেনসেট বরাদ্দ নিয়ে কিছু বেসরকারি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট সরাসরি পেট্রোল পাম্পে বিক্রি করছে। এমনকি কিছু প্ল্যান্ট কোনো পরিশোধন ছাড়াই গ্যাসক্ষেত্র থেকে কনডেনসেট সরাসরি বিক্রি করে বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে কম ভ্যাট পাচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেন, কনডেনসেট বরাদ্দের পর, বিপিসির কাছে অকটেন, পেট্রোল এবং ডিজেল বিক্রির পরিমাণ এবং ভ্যাট প্রদান রেকর্ড বিশ্লেষণ করলে এসব অনিয়মের প্রমাণ সহজেই পাওয়া যাবে। তারা আরো বলেন, ‘‘সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যারা সরকারকে সর্বোচ্চ পরিমাণ পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ এবং সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদান করেছে, শুধুমাত্র তাদেরই কনডেনসেট বরাদ্দ দেওয়া উচিত।’’
বর্তমানে কয়েকটি বেসরকারি এবং একটি সরকারি ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট কনডেনসেট বরাদ্দ পাচ্ছে। এর মধ্যে সরকারি রশিদপুর ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট দৈনিক ৪,২৫০ ব্যারেল, বেসরকারি সুপার পেট্রোকেমিক্যাল এবং পেট্রোম্যাক্স রিফাইনারি লিমিটেড ২,২৫০ ব্যারেল, এবং অ্যাকোয়া রিফাইনারি লি. দৈনিক ৭৫০ ব্যারেল কনডেনসেট পাচ্ছে। এছাড়াও, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এক ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্ট ১,৩০,২৯৩ টন কনডেনসেট এবং ৭৬,৮১৬ টন বিদেশী কনডেনসেট আমদানি করেছে। তবে, বিপিসি পেয়েছে মাত্র ১,৩৯,৫৪৭ টন অকটেন, পেট্রোল এবং ডিজেল, যা মোট কাঁচামালের ৬৭.৬৮ শতাংশ। এর ফলে সরকারের প্রায় ১৬৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
বিপিসি সূত্র জানায়, কিছু কোম্পানি কনডেনসেট বেশি বরাদ্দ নেওয়ার জন্য তাদের ফ্রাকশনেশন প্ল্যান্টের পরিশোধন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে এবং তাতে তারা স্থানীয় পেট্রোল পাম্পে কনডেনসেট বিক্রি করছে।
বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম আকন্দ জানান, ‘‘প্রতিটি ইঞ্জিন নির্দিষ্ট জ্বালানির জন্য ডিজাইন করা হয়। সঠিক জ্বালানি না দিলে ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে যাবে, জ্বালানি খরচ বাড়বে এবং যানবাহনের আয়ু কমে যাবে।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এ ধরনের ভেজাল তেলের কারণে বিলাসবহুল গাড়ি স্টার্ট নিতে পারবে না এবং কম দামের গাড়ি দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে।’’
বিপিসি ইতোমধ্যে ১৪টি পেট্রোল পাম্প, ২২৪ এজেন্ট এবং ৩৫৮ প্যাকড পয়েন্ট ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করেছে। এখনো ২০৫টি এজেন্ট এবং ১৫৫ প্যাকড পয়েন্ট ডিলারের লাইসেন্স বাতিল প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: