মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর সহকারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতি নিয়ে ফের বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে প্রণীত খসড়া জ্যেষ্ঠতা তালিকা ব্যবহার করেই তড়িঘড়ি পদোন্নতি কার্যক্রম চলছে - যা নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে তীব্র অসন্তোষ ও প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
মাউশির সাধারণ প্রশাসন শাখার উচ্চমান সহকারী শাহাদৎ হোসেন এই পদোন্নতির দাপ্তরিক কাজে জড়িত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই পদোন্নতিপ্রত্যাশী হওয়ায় প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে নানা কৌশল গ্রহণ করেছেন।
২০২৫ সালের ১৭ মার্চ অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) বেগম বদরুন নাহার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বলা হয়, জ্যেষ্ঠতা তালিকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
যথাযথ হালনাগাদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া হলে কেউ বঞ্চিত হতে পারেন বলেও সতর্ক করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মাউশি থেকে ২৯ মে একটি পত্র জারি করা হয়, যেখানে জ্যেষ্ঠতা তালিকা সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজন ও হালনাগাদ করার জন্য ১০ কর্মদিবসের মধ্যে আবেদন আহ্বান করা হয়।
কিন্তু যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায়ই শাহাদৎ হোসেন, বেলাল, নজমুল ও আব্দুর রহিমসহ একটি সিন্ডিকেট খসড়া তালিকাটিই মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রুটিন দায়িত্বে থাকা পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর বি. এম. আব্দুল হান্নান এর পিএ আব্দুর রহিমও ওই তালিকায় পদোন্নতিপ্রত্যাশী।
অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি মাত্র তিন দিনের মধ্যে ২৭৭ জনের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেন, যেখানে সিন্ডিকেটভুক্ত ৮৬ জনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, অনেকে অভিযোগ করছেন—অন্য কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় নথি (এসিআর, প্রত্যয়নপত্র, স্থায়ীকরণ কাগজপত্র) ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।
বিধিমালা অনুযায়ী এই খসড়া তালিকা ওয়েবসাইট বা নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফলে পদোন্নতি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের মাধ্যমেই তালিকাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অতীতেও একই সিন্ডিকেট ২০২৪ সালের আগস্টে অনিয়মের মাধ্যমে পদোন্নতির চেষ্টা চালিয়েছিল, তবে আদালতের আদেশে তা স্থগিত হয়।
একজন পরিচালক বলেন, “মানহীন ও কালো তালিকাভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সনদধারী কর্মকর্তারাও এবার পদোন্নতির তালিকায় স্থান পেয়েছেন- যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত।
বর্তমানে রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজির স্বাক্ষরে এই তালিকা পাঠানোয় প্রশ্ন উঠেছে।
দ্রুততম সময়ে নতুন ডিজি যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই তালিকা পাঠানোয় অনিয়ম ও লেনদেনের সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে।
সূত্র জানায়, এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ২৭৭ জনের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে ১৩ ও ১৪ গ্রেডে কর্মরত। পদোন্নতি পেলে তারা সহকারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
অন্যদিকে, সংক্ষুব্ধ কর্মচারীরা বলেন, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারী (জ্যেষ্ঠতা ও পদোন্নতি) বিধিমালা ২০১১-এর ৯ নম্বর ধারা অনুযায়ী খসড়া তালিকা প্রকাশ, আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির সময় না দিয়েই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে অনিয়ম ও গোঁজামিলের আশঙ্কা প্রবল।
এর আগে, গত বছরও একইভাবে অনিয়মিত জ্যেষ্ঠতা তালিকা ব্যবহার করে পদোন্নতির চেষ্টা করা হলে আদালত তা স্থগিত করে দেয়।
এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ( মাধ্যমিক) বেগম বদরুন নাহার বলেন, তালিকা আসুক। আমরা বিষয়টি যাচাই বাছাই করে দেখবো। এক্ষেত্রে কোন অনিয়মকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে স্পষ্ট মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা। প্রসঙ্গত, প্রেরিত তালিকাটি একটি খসড়া তালিকা। চূড়ান্ত করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে মাউশির ডিজি প্রফেসর বি. এম. আব্দুল হান্নানকে মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে কল কেটে দেন।
পরবর্তীতে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এসআর
মন্তব্য করুন: