[email protected] মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫
২০ কার্তিক ১৪৩২

মাউশির ডিজি নিয়োগে শিক্ষা প্রশাসনের সিন্ডিকেট সক্রিয়

সাইদুর রহমান

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২৫ ৫:৩১ পিএম

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষা প্রশাসনের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত এই সিন্ডিকেট ইতোমধ্যে আটজন কর্মকর্তার নামের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।


তবে এই তালিকা থেকে কে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাবেন, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এরই মধ্যে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে লবিং ও তদবির।

সূত্র মতে, সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বদরুন্নাহার এবং যুগ্মসচিব মিজানুর রহমান।


শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও অধিদপ্তরে নিয়োগ, বদলি ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে এই তিনজনের প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত।

অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, মাউশির ডিজি পদে বিবেচনাধীন আটজন কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষা ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন।

শিক্ষা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ডিজি পদে নিয়োগে দীর্ঘদিন ধরে একটি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার করে আসছে।

এতে যোগ্য কর্মকর্তারা প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।


মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আটজন কর্মকর্তার নাম নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে আলোচনার ঝড় উঠেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য বলছে, এসব কর্মকর্তার অনেকেই অতীতে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা, প্রশাসনিক প্রভাব ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আলোচনায় ছিলেন।

রেহেনা পারভীন-
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব রেহেনা পারভীন দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রশাসনিক সূত্র বলছে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাবশালী এক সংসদ নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

তার দ্রুত পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পদায়নকে ঘিরে প্রশাসনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তার স্বামী ফওজুল আজিম বিচার প্রশাসনের খায়রুল কমিশনের সদস্য ছিলেন।

বদরুন নাহার-
অতিরিক্ত সচিব বদরুন নাহার শিক্ষাঙ্গনে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
শিক্ষাজীবনে ছাত্র সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে জানা যায়। মন্ত্রণালয়ের ভেতরে তার প্রশাসনিক প্রভাব ও পদোন্নতির পেছনে রাজনৈতিক সংযোগের অভিযোগ রয়েছে। সূত্র বলছে, বিদেশে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও উঠেছিল, যদিও তা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত হয়নি।
মিজানুর রহমান-
১৮তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রভাবশালী প্রশাসক হিসেবে পরিচিত। বদলি, পদায়ন ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে তার ভূমিকা নিয়ে সহকর্মীদের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে।
মেহেরুন নেছা-
মেহেরুন নেছা শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। তবে তার বিদেশ প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে। প্রশাসনে তার অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
রায়হানা তসলিমা-
রায়হানা তসলিমা ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার স্বামীও শিক্ষা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা ছিলেন। অতীতে মাউশির কার্যক্রমে তাদের যুগল প্রভাবের অভিযোগ উঠেছিল।
বর্তমানে তিনি মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং সম্প্রতি ডিজি পদে যোগ্যতা নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় প্রভাব রাখার অভিযোগ উঠেছে।

মাহবুব সরফরাজ-
সরফরাজ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাবনার সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে প্রশাসনিক জটিলতার মুখে পড়েন। পরবর্তীতে তাকে ওএসডি করা হয়।

মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া-
এই কর্মকর্তা অতীতে শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। প্রভাবশালী এক সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হিসেবে তার নাম প্রশাসনে আলোচিত।
পদায়ন ও দায়িত্ব পালনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ থাকলেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শামীম আহসান খান, সাদী মোহাম্মদ ও ছদরুদ্দিন আহমেদ-
এদের মধ্যে শামীম আহসানের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। সাদী মোহাম্মদ দীর্ঘদিন শিক্ষক সংগঠন ‘স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ’-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অন্যদিকে ছদরুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অতীতে শৃঙ্খলাজনিত অভিযোগে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।

নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি-
শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, মাউশির ডিজি পদে নিয়োগে স্বচ্ছতা, মেধা ও প্রশাসনিক যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিলে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা আরও বাড়বে।

একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,এই পদটি শুধু প্রশাসনিক নয়, নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে প্রভাব নয়, যোগ্যতাই প্রধান বিবেচনা হওয়া উচিত।

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর