[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
১৫ কার্তিক ১৪৩২

বিতর্কিতদের নিয়েই ডিজি পদের সংক্ষিপ্ত তালিকা, শিক্ষা প্রশাসনে তোলপাড়

সাইদুর রহমান

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ৩:১৮ এএম

সংগৃহীত ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রভাব বিস্তারকারী তিনজন জ্যেষ্ঠ আমলার একটি সিন্ডিকেট.মাউশি মহাপরিচালক (ডিজি) পদে নিয়োগের জন্য আটজন প্রার্থীর নামের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বলে জানা গেছে।

তবে এই আটজনের মধ্য থেকে চূড়ান্তভাবে কে নিয়োগ পাবেন, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি।

গত ৬ অক্টোবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি)  নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, প্রার্থীকে সৎ, দায়িত্বপরায়ণ, প্রশাসনিক কাজে দক্ষ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের স্বাক্ষর থাকতে হবে।

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলোর দাবি, তালিকাভুক্ত অধিকাংশ প্রার্থীর নাম এসেছে সিন্ডিকেটের প্রভাবে এবং তাদের অনেকে বিতর্কিত অতীতের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ।

সূত্র জানায়, অতিরিক্ত সচিব বদরুননাহারের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব সরফরাজ। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গণঅভ্যুত্থানের পর ওএসডি হলেও পরে জয়পুরহাট কলেজে বদলি হন।

একই তালিকায় রয়েছেন নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমেদ ভূঁইয়া, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই। অতীতে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেছেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় কয়েক দফায় তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

তৃতীয় প্রার্থী প্রফেসর শামীম আহসান খান, বরিশালের আবুল কালাম কলেজের অধ্যক্ষ। তার বিরুদ্ধে সাত কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক তদবিরে নিষ্পত্তি হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র দাবি করেছে, সাম্প্রতিক সময়েও রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি ডিজি পদের দৌড়ে রয়েছেন।

অন্য এক প্রার্থী অধ্যাপক এ.বি.এস.এ. সাদী মোহাম্মদ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের এই কর্মকর্তা ছাত্রজীবনে ভিন্নধর্মী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে তিনি স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সক্রিয় নেতা হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে ডিজি পদের তালিকায় তার নাম উঠে এসেছে বলে সূত্র জানায়।

তালিকায় আরও আছেন অধ্যাপক ড. ছদরুদ্দিন আহমদ, তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ। তার বিরুদ্ধে “অসদাচরণ” ও “দুর্নীতি”-সংক্রান্ত বিভাগীয় মামলা প্রমাণিত হওয়ায় পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, এসব তথ্য গোপন করে তিনি পুনরায় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পান।

এছাড়া আলোচনায় আছেন বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মেহেরুন্নেছা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষার ১৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা এবং তার স্বামী—একজন সরকারি কর্মকর্তা—রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত পটভূমির কারণে আলোচনায় রয়েছেন।

অন্যদিকে, অধ্যাপক রায়হানা তাসলিমা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার আত্মীয় হিসেবে পরিচিত। তিনি ও তার স্বামী দুজনই শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে পূর্বে প্রকল্পের অর্থনৈতিক অনিয়ম ও প্রশাসনিক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ওঠে।

শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ও ১৬ ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল যোগ্য ও সৎ প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হবে, কিন্তু তালিকায় এসেছে বিতর্কিতদের নাম। এতে পুরো শিক্ষা প্রশাসন এখন আলোচনায়।

তাদের দাবি, সিন্ডিকেট প্রভাবমুক্ত থেকে যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের বাছাই না হলে শিক্ষা প্রশাসনে নতুন সংকট তৈরি হবে।

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর