[email protected] মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
৫ কার্তিক ১৪৩২

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন নিয়ে ‘সীমিত সম্ভাবনা’—পে-কমিশন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ৯:২৯ পিএম

সংগৃহীত ছবি

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নসহ বেতন–ভাতা পুনর্গঠন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির দাবি নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পে-কমিশন।

সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পে-কমিশন ভবনে আয়োজিত এ বৈঠক চলে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় পে-কমিশনের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান।

১১তম গ্রেড বাস্তবায়নে সীমিত সুযোগ

বৈঠকের শুরুতেই শিক্ষক নেতারা ৭ আগস্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রস্তাবের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন।

এ বিষয়ে চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান বলেন,

“প্রস্তাবটি কমিশনের কাছে রয়েছে, তবে এর বাস্তবায়নের সুযোগ খুবই সীমিত। বিষয়টি পে-কমিশনের নয়, সরকারি সার্ভিস কমিশনের আওতাধীন।”

তিনি জানান, কমিশন বিষয়টি নোট আকারে বিবেচনায় নিয়েছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেই আসবে।

শিক্ষক সংগঠনের নেতারা ছয় সদস্যের পরিবারের খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় বিবেচনায় নতুন বেতন কাঠামোর প্রস্তাব দেন।
তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী—

  • বর্তমান ২০টি গ্রেড কমিয়ে ১২টি গ্রেডে নামিয়ে আনা,
  • সর্বনিম্ন বেসিক বেতন ৩৫ হাজার এবং
  • সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা।
    এতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ গ্রেডের অনুপাত দাঁড়াবে ১:৪।

শিক্ষক নেতারা আরও দাবি জানান—

  • চিকিৎসা ভাতা: ১০,০০০ টাকা
  • শিক্ষা ভাতা: এক সন্তানের জন্য ৫,০০০ ও দুই সন্তানের জন্য ১০,000 টাকা
  • বাড়িভাড়া ভাতা: এলাকাভেদে ৬৫–৮০% পর্যন্ত
  • বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট: ১০%
  • যাতায়াত ভাতা: ন্যূনতম ৩,০০০ টাকা (সকল পর্যায়ের জন্য)

তারা জানান, বর্তমানে কেবল সিটি করপোরেশন এলাকায় কর্মরত শিক্ষকরা যাতায়াত ভাতা পান, কিন্তু গ্রামীণ ও মফস্বল পর্যায়ের শিক্ষকেরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

নেতারা অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের পে-স্কেলের ৭(খ) অনুচ্ছেদের ভুল ব্যাখ্যার কারণে তারা উচ্চতর গ্রেড সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তাই নতুন পে-স্কেলে তিনটি টাইমস্কেল পুনর্বহাল এবং শতভাগ পদোন্নতি বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।

বৈঠকে শিক্ষকরা জানান, তাদের দৈনিক টিফিন ভাতা মাত্র ৬ টাকা ৬৬ পয়সা, যা দিয়ে এক কাপ চা পর্যন্ত কেনা সম্ভব নয়।
এই তথ্য শুনে কমিশনের সদস্যরা বিস্ময় প্রকাশ করেন।

অতিরিক্তভাবে শিক্ষক সংগঠনগুলো দাবি তোলে—

  • শতভাগ পেনশন ও আনুতোষিক অর্থ
  • প্রতি দুই বছর অন্তর শ্রান্তি-বিনোদন ভাতা
  • নববর্ষ ভাতা ৫০ শতাংশ
  • সকল শিক্ষকের জন্য রেশন সুবিধা চালুর দাবি। 

পে-কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন,

“আমরা প্রথমেই শিক্ষকদের মতামত নিচ্ছি, কারণ তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষকরা বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিয়েছেন, এগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হবে।”

শিক্ষক নেতাদের প্রতিক্রিয়া

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,

“আমরা বাজারদর ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় পরিবারের ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বেতন কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছি।”

তবে সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন নিয়ে পে-কমিশনের ‘সীমিত সম্ভাবনার’ মন্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
তার ভাষায়,

“যদি প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন না হয়, তবে আমাদের সামনে কঠোর আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।”

পে-কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষকরা ১১তম গ্রেড বাস্তবায়ন ও বিভিন্ন সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানান। কমিশন জানিয়েছে, প্রস্তাবটি তাদের বিবেচনায় আছে, তবে বাস্তবায়নের সুযোগ সীমিত। শিক্ষকরা এ অবস্থায় হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর