[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি ২০২৫
২৬ পৌষ ১৪৩১

প্রশ্ন ফাঁস তদন্তের মাঝেই পিএসসির নিয়ম বহির্ভূত কার্যক্রম

সাইদুর রহমান

প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২:১৬ এএম
আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪:১৯ এএম

পিএসসি ভবন

★ স্থবির সকল পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রদান

দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চলা প্রশ্নফাঁস বন্ধে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে যখন দুদকসহ অন্যান্য সংস্থা তদন্তে ব্যস্ত ঠিক সে সময় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যাস্ত ৯ম গ্রেডে নজিরবিহীন ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পদোন্নতির নিয়োগ বিধি প্রনয়ণে।

কেবল তাই নয় ঢালাওভাবে নিয়মবহির্ভূত পদোন্নতি দিতেও সংস্থাটি এখন তৎপর। এদিকে স্থগিত রয়েছে পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রদানসহ সব কাজ।

প্রায় প্রতিদিনই ফলাফল প্রকাশ সহ নানা দাবিতে বিক্ষোভ করছে চাকরি প্রার্থীরা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের ১০০০ এর মতো জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে দীর্ঘদিন আগে পরীক্ষা শেষ হলেও ফলাফলের জন্য অনশনসহ আন্দোলন করে আসছে চাকরি প্রার্থীরা।

এছাড়াও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ও দীর্ঘদিনে প্রকাশ করা হয় নি।

২০১৮ সালে চাকুরিতে যোগদানকৃত ৭ জন সহকারী পরিচালককে বঞ্চিত দেখিয়ে ২০১৩ সাল থেকে ভূতাপেক্ষভাবে উপপরিচালক পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। চাকুরীতে যোগদান না করে এ ধরনের পদোন্নতি নজিরবিহীন।

বিগত বছরগুলোতে নিম্নপদ থেকে ৯ম গ্রেডে পদোন্নতি প্রাপ্ত কর্মকর্তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস সহ বিভিন্ন অনিয়মের কারনে অভিযুক্ত গ্রেফতার ও বিভিন্ন শাস্তি পাওয়ার পরও তাদের ৫৫-৭০ ভাগের পদোন্নতির সুযোগ রেখে একটা খসড়া বিধিমালা প্রস্তাব করেছে কর্মকমিশন।

বর্তমানে ১৮ টি সরাসরি নিয়োগযোগ্য ১৮ টি সহকারী পরিচালকের পদ খালি থাকলেও বিগত বিসিএসগুলো থেকে নিয়োগ দেয়নি পিএসসি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিগত সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশন ৫ আগস্টের পর থেকেই আফিসে অনিয়মিত। স্থগিত রয়েছে সকল কার্যক্রম।

এমনকি স্থগিত রয়েছে বিসিএস ক্যাডারদের চাকুরী স্থায়ীকরনের বিভাগীয় পরীক্ষা ও পদোন্নতির জন্য সিনিয়র স্কেল পরীক্ষা। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মরত হাজার হাজার ক্যাডার অফিসার।

আর চাকরি প্রার্থীদের বিসিএস সহ অন্যান্য নিয়োগ পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ ও স্থগিত। আর নড়বড়ে এ কমিশনের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে দূর্নীতিবাজ ও সুযোগসন্ধানীরা।

এমনকি প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের নিয়ে গঠিত পিএসির তদন্ত কমিটি অভিযুক্তদের কোনো দোষই খুঁজে পাইনি বলে রিপোর্ট পেশ করেছে যা নিয়ে তীব্র বিরোধিতা করেছে সরকারের তদন্ত প্রতিষ্ঠান সিআইডি।

চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি গত জুলাইয়ে প্রকাশ্যে আনে সিআইডি। ওই ঘটনার পর তদন্ত কমিটি করে পিএসসি। তবে সে তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মেলেনি।

এমনকি গ্রেপ্তার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় স্বীকার করে আদালতে দেয়া জবানবন্দিও আমলে নেয়নি তদন্ত কমিটি। গত ৫ জুলাই রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পিএসসি যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার প্রধান ছিলেন কমিশনের যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম খান। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন কমিশনের পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা ও মোহাম্মদ আজিজুল হক।

সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে ওই কমিটি পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাদের তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা পায়নি বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। কমিটি রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশও করেনি। তারা তদন্তে প্রতিষ্ঠানের প্রশ্ন সংরক্ষণ ও সরবরাহের বিষয়ে সুপারিশ করেছে।

এ বিষয়ে পিএসসির তদন্ত কমিটির প্রধান ড. আব্দুল আলীম খান বলেন, ‘আমরা তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা পাইনি। তা আমরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছি। কিছু সুপারিশ করেছি।

এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, ‘পিএসসির কমিটি তাদের কোনো বক্তব্য নেয়নি। কোনো বিষয়ে তথ্যও চায়নি। সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি আমরা পাই, ওই দিনই আমাদের বক্তব্যের জন্য যেতে বলে। তবে সেদিন আদালতে আমাদের মামলার তারিখ থাকায় যেতে পারিনি।
এ বিষয়ে পিএসসিকে জানানো হয়েছে। পরে পিএসসি আর আমাদের বক্তব্য নেয়নি।

সিআইডি অভিযোগ করেছে, ঘটনার শুরু থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে পিএসসি। শুরুতেই তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। সিআইডির তদন্তেও তারা সহযোগিতা করছে না।

যে জায়গা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, সেই কক্ষের সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাইলেও তা সরবরাহ করেনি পিএসসি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, ‘আমাদের পিএসসির কেউ মোবাইলেও ফোন দিয়ে বক্তব্য চায়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অনেক তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।

এসব বিষয়ে পিএসসির সচিব আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বক্তব্য চাইলে তিনি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে বলেন। এদিকে অসংখ্যবার পিএসির চেয়ারম্যান মো সোহরাব হোসাইনকে কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর