★ মাউশিতে লিখিত অভিযোগ ★ ৭ শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি শিক্ষার্থীদের ★ সাবেক এমপি সানজিদা ও সভাপতি আনুর কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ★ শিক্ষকদের দলাদলিতে অস্থির প্রতিষ্ঠানটি
অনিয়ম-দুর্নীতিতে যেন ডুবতে বসেছে রাজধানীর জুরাইনে অবস্থিত সালাহউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়। কখনো গভর্নিং বডির সভাপতি, কখনো প্রতিষ্ঠান প্রধান, আবার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করছেন।
শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের কোন্দলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের পথে। একসময় যে প্রতিষ্ঠানটিতে দেড় হাজারের অধিক শিক্ষার্থী ছিলো বর্তমানে সেই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪শতে নেমে এসেছে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক লুটপাট ও নানা অনিয়মের চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগে।
গত ৮ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক বরাবর এই অভিযোগ দেয়া হয়।
এদিকে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তর্প্বূক ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন মাউশির ডিজি অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম। তিনি প্রতিদিনের বাংলাকে বলেন, শিগগিরই আমরা এই প্রতিষ্ঠানের সকল অভিযোগ তদন্ত করবো। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।
অভিযোগপত্রে যা আছে-
সালাউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন তার নিয়োগ সংক্রান্ত সিএস কপিতে রিমা আক্তার এর নাম ফ্লুইড দিয়ে মুছে তার নাম দেখিয়ে এমপিওভুক্তি নিয়েছেন। আপীল এন্ড আরবিট্রেয়ানে থাকা শিক্ষকদের বিষয়ে ইস্যুকৃত পত্রের আলোকে তদন্ত না করিয়ে তিনি তাদেরকে বিদ্যালয়ে যোগদান করিয়েছেন।
তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না। আপীল এন্ড আরবিট্রেশনে থাকা শিক্ষক হাসিনা আখতারকে এডহক কমিটিতে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি শিক্ষক কর্মচারীদের সাথে অসধাচরন করেন। তিনি ও তার সহকারি প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হকসহ তার পেটুয়া বাহিনীর ৭ শিক্ষক মিলে স্কুলের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
সহকারি প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হকের নিয়োগের ক্ষেত্রে এমপিও নীতিমালা ২০১৮ মানা হয়নি। কেবল তাই নয় তিনি যে প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন সে বিদ্যালয়ের প্যাড তৈরি করে ১০ বছরের অভিজ্ঞতার সনদ তৈরি করেছেন। তিনি সবসময় দুই জন মহিলা শিক্ষককে তার দুই পাশে বসিয়ে বিদ্যালয় অফিস কক্ষে বসে থাকেন। তিনি শিক্ষকদের অযথা গালাগালি করেন এবং কিছু হলেই নিজের ক্ষমতা দেখান। কোন শিক্ষার্থী ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে ছাড়পত্র না দিয়ে বলেন, পারলে আমার নামে মামলা করেন। আমি ছাড়পত্র দিবোনা। তিনি ছাত্র আন্দোলনে এডভোকেট সানজিদা খানমের সাথে সবসময় মাঠে থাকতেন। তিনি ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে শিক্ষকদের মাঠে থাকার জন্য মৌখিক নির্দেশ দিতেন।
তিনি শ্রেণী কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে না যাওয়ার জন্য হুমকী প্রদান করেন। তার পেটুয়া বাহিনীর সদস্য ইব্রাহীম হোসেনের অনৈতিক কোন কাজের বিচার তার জন্য করা যেতো না। তিনি জোর করে স্কুলের টাকা খরচ করে টুঙ্গীপাড়ায় শেখ মুজিবুরের মাজারে পিকনিক করতে বাধ্য করেন।
সহকারি শিক্ষক হাসিনা আখতারের (সামাজিক বিজ্ঞান) এমপিও অবৈধ বলে দাবি করা হয়। সহকারি শিক্ষক জাহিদুর রহমানের (ইংরেজি) নিয়োগও বিধি সম্মত হয়নি।
সহকারি শিক্ষক ইব্রাহীম হোসেন (ব্যবসায় শিক্ষা) হলেন নারী লোভী শিক্ষক, তিনি ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের বিপক্ষে লাঠি দিয়ে ছাত্রদের ধাওয়া দিয়েছেন। তার নিয়োগেও ভেজাল রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী পরিচয়ে ক্যাম্পাসে ক্ষমতা দেখান। কেবল তাই নয় তিনি তার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করান।
সহকারি শিক্ষক সৈয়দা নাজমুননাহার (প্রাথমিক শাখা) মাত্র এসএসসি পাস। তিনি প্রাথমিক শাখার শিক্ষক হয়েও প্রভাতী শাখার ইনচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। কথায় কথায় শিক্ষকদের চাকরি খাওয়ার হুমকী দেন।
সহকারি শিক্ষক রেজাউল করিমের (প্রাথমিক শাখা) নিয়োগ বিধি সম্মত হয়নি। তিনি শিক্ষক শিক্ষার্থীর গালাগালি করেন। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক এমপি সানজিদা খানম ও প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন আনুর নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠানটির কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
সালাউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে সরেজমিনে কথা হয় মিথিলা, সুমাইয়া, খুুশি, লামিয়া ও আন্নার সাথে। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এখানে দুজন শিক্ষক (ইব্রাহীম হোসেন ও রেজাউল করিম রেজা) আছেন, যারা সব সময় মেয়েদেরকে যৌন হয়রানি করেন। নৈতিক স্খলনে ধ্বংসের পথে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। এখানে লেখাপড়ার চেয়ে ক্লাসে শিক্ষকদের আড্ডা হয় বেশি।
এদিকে একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী রিফাত, সিয়াম, রাফসান, মেহেদী ও প্রান্ত সাংবাদিকদের বলেন, অনিয়ম, দুর্নীতি আর শিক্ষকদের দলাদলিতে প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের মুখে পড়েছে। আমরা অবিলম্বে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের দাবি জানাই।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সাবেক এমপি সানজিদা খানম ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আনুর সাথে প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক মিলে সিন্ডিকেট করে সকল অবৈধ টাকার ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যে নিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন ও সহকারি প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হকের সাথে কথা বললে তারা তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সরেজমিনে সালাউদ্দিন আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশমুখে ব্যাপক পানি জমে আছে। প্রতিষ্ঠানটির আশপাশ ও ভিতরে নোংরা পরিবেশে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন। কেবল তাই নয় সামান্য বৃষ্টি হলেই প্রতিষ্ঠানটির ক্লাসরুমের মধ্যে পানি জমে যায়। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের অনিয়ম, দুর্নীতি আর তাদের দলাদলিতে প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের মুখে। দিনদিন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার মান কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।
এসআর
মন্তব্য করুন: