চাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল-শিবিরের পৃথক প্যানেল ঘোষণা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে পৃথকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত দুটি প্যানেল

উভয় প্যানেলই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, আবাসন, নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার—এই চারটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

বুধবার (৮ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে সংবাদ সম্মেলন করে শিবিরসমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ তাদের ৩৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে। এক ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে তিনটায় একই স্থানে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল ৮ দফা ইশতেহার প্রকাশ করে।

ছাত্রদল প্যানেল: শিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে ৮ দফা

চাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল তাদের ইশতেহারে শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ও নারী শিক্ষার্থীদের কল্যাণকে প্রাধান্য দিয়েছে।

ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন বলেন,

“আমরা শিক্ষার্থীদের বাস্তব চাহিদা বিবেচনা করেই ইশতেহার প্রণয়ন করেছি। আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা।”

ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়—

• আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অনলাইন স্টুডেন্ট পোর্টাল ও গবেষণাসফটওয়্যার (যেমন ম্যাটল্যাব) চালু করা হবে।
• কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা এবং প্রতিটি হলে পাঠাগার স্থাপন করা হবে।
• সেশনজট নিরসনে ওপেন ক্রেডিট সিস্টেম চালু ও প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস করা হবে।
• বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল বই, ভাতা বৃদ্ধি ও হলে সিট সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হবে।
• খাদ্য ও আবাসনে সুলভমূল্য নির্ধারণ এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ‘একটি সিট, একটি পড়ার টেবিল’ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
• নিরাপত্তা জোরদারে সিসিটিভি, হেল্পলাইন ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধ সেল গঠন করা হবে।
• নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্যানিটারি প্যাড ভেন্ডিং মেশিন, নারী মেডিকেল অফিসার ও কাউন্সেলিং সেবা চালুর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
• যাতায়াতে শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি, ই-কার ও বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করা হবে।
• স্বাস্থ্যসেবায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারকে ১০০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া বিকাশে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণাকেন্দ্র, আন্তবিভাগ প্রতিযোগিতা, সুইমিংপুল ও জিমনেসিয়াম নির্মাণ এবং শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার উন্নয়নে জব ফেয়ার ও স্টার্টআপ সহায়তা কর্মসূচি চালুর ঘোষণাও দেওয়া হয়।

শিবির সমর্থিত প্যানেল: ১২ মাসে ৩৩ দফা বাস্তবায়নের ঘোষণা

‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’-এর ভিপি প্রার্থী মো. ইব্রাহীম হোসেন রনি বলেন,

“আমাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ কল্যাণ ও ক্যাম্পাস উন্নয়নকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে। এক বছরের মধ্যেই ৩৩ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েছি।”

ইশতেহারে ৯টি মূল অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে—আবাসন, যাতায়াত, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, নিরাপদ ও সবুজ ক্যাম্পাস, সেশনজট নিরসন, নারীবান্ধব পরিবেশ, গবেষণা, দাপ্তরিক অটোমেশন ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণ।

মূল উদ্যোগগুলো হলো—

• আবাসন সংকট নিরসনে বিদ্যমান হল সংস্কার, নতুন টিনশেড নির্মাণ ও আসন সংখ্যা ১০% বৃদ্ধি।
• যাতায়াত ব্যবস্থায় শাটল ট্রেনের বগি বৃদ্ধি ও ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু।
• সুলভমূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার সরবরাহ ও ক্যানটিনের মান নিয়ন্ত্রণ।
• নারী শিক্ষার্থীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি, চাইল্ড কেয়ার কর্নার, ব্রেস্টফিডিং জোন ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেল শক্তিশালীকরণ।
• গবেষণার মানোন্নয়নে গবেষণা বৃত্তি, রিসার্চ ফেস্ট আয়োজন ও লাইব্রেরি আধুনিকায়ন।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রকে ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা এবং বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বল্প খরচে চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া।
• নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসিটিভি, পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা ও পার্টটাইম নিরাপত্তা টিম গঠন।
• পরিবেশ রক্ষায় গ্রিন ক্যাম্পাস কর্মসূচি, প্লাস্টিকবিরোধী প্রচারণা ও সৌরশক্তি ব্যবহার।
• চাকসু নির্বাচনকে ঘিরে দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক উত্তাপ বেড়েছে। দুই প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রতিযোগিতামূলক প্রতিশ্রুতি ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে ক্যাম্পাসজুড়ে।