news.protidinerbangla22@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৪ আশ্বিন ১৪৩১

কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ

আদালতের নির্দেশনার পরও ৮ বছর ক্যাম্পাস ছাড়া উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিন

সাইদুর রহমান

প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৭:১৭ পিএম
আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৮:৩৪ পিএম

উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিন

★ আমলে নেয়া হয়নি মন্ত্রণালয় ও মাউশির ১৫ দফা চিঠি ★ উপাধ্যক্ষের অপরাধ তিনি বিএনপির অনুসারী ★ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বেতন বন্ধ

আদালতের নির্দেশনার পরও ক্যাম্পাস ছাড়া কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিন। বিএনপির অনুসারী হওয়ায় তাকে ততকালীন আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক এমপি মাহবুবুল উল আলম হানিফ তাকে নানাভাবে হয়রানি করে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বপদে পুনর্বহালের জন্য কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিনের জন্য দফায় দফায় সুপারিশ করেছে।

কিন্তু দুই দফায় আটবছর কলেজ ছাড়া থাকতে হচ্ছে এই শিক্ষককে।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. হাবিবুল ইসলাম, শিক্ষক টিপু সুলতান ও গভর্নিং বডির সদস্যদের কারণে তিনি কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারেননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষকের। এমন অবস্থায় মন্ত্রণালয়, মাউশি ও আদালতের আদেশকে আমলে না নেয়া অধ্যক্ষের বেতনভাতা বন্ধ করে দিয়েছে মাউশি।

গত ৮ সেপ্টেম্বর মাউশি থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বেতন বন্ধ ও গভর্নিং বডির সভাপতির পদ শূন্য ঘোষণা করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী এই শিক্ষকের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব-উল আলম হানিফের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
তিনি প্রতিষ্ঠানের তহবিলের অর্থ টাকা আত্মসাৎ, জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু কেউ মুখ খুলতে পারত না। ইতোমধ্যে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে এসব অনিয়ম প্রমাণিত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে অধ্যক্ষ হাবিবুল ইসলামও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ এই শিক্ষকের।

জানা গেছে, নিয়োগ বৈধ নয় এমন অভিযোগ তুলে কলেজটির উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিনকে ২০১৪ সালে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির নির্দেশে ২০১৬ সালে তাকে স্বপদে পুনর্বহাল করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু ২০১৯ সালে তাকে ফের বরখাস্ত করা হয়। সেই সময় থেকে কলেজে যেতে পারছেন না তিনি। এক বছর ধরে বেতন-ভাতাও বন্ধ।

এদিকে বরখাস্ত হওয়ার আদেশ প্রত্যাহারের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশিতে আবেদন করেন উপাধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিন। পরে ২০২২ সালের ২৭ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাকে পুনর্বহালের জন্য চিঠি দেয়া হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে। পরবর্তীতে একই বছরের ৬ জুলাই, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ ফের চিঠি দেয়া হয়।

তারপরও মাউশির চিঠি আমলে না নেয়ায় একই বছরের ২ মার্চ সাবিনা ইয়াছমিনকে পুনর্বহালের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তাকে পুনর্বহালের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী এই শিক্ষক পুনর্বহাল করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে স্বপদে পুনর্বহালের জন্য ২০২৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় নির্দেশনা দেয়া হয়।

কিন্তু এখন পর্যন্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মো. হাবিবুল ইসলাম এবং ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষের পদে আছেন আতাহার আলি। অথচ চেয়ারে বসতে পারেননি সাবিনা।

এদিকে মন্ত্রণালয়-মাউশি ঘুরে পুনর্বহাল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক। রিটের শুনানি শেষে গত ২৬ মে তাকে পুনর্বহালের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। পরবর্তীতে আদালতের আদেশকে আমলে নিয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মিজানুর রহমান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাবিনা ইয়াছমিনকে পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেন।

সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমাকে কলেজ থেকে দুই দফায় ৮বছর আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফের প্রত্যক্ষ মদদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাকে ঢুকতে দেয়নি। অথচ বর্তমান অধ্যক্ষ স্পষ্টভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে এই পদে আছেন।

তার চেয়েও কলেজে ৪ জন সিনিয়র শিক্ষক আছেন। সবার মধ্যে আমি জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। এতবছর পর মন্ত্রণালয়, মাউশি ও আদালত থেকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। কিন্তু গত ১৪ আগস্ট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের চিঠি নিয়ে কলেজে গেলে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শিক্ষক টিপু সুলতানসহ আরও কয়েকজন মিলে টেনে হেঁচড়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই।

সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, ‘অভিজ্ঞতা বিবেচনা করেই কলেজ আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। আমার কাম্য অভিজ্ঞতা আছে। আর কাগজপত্র যদি ঠিক না থাকে তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি আমাকে স্বপদে পুনর্বহালের আদেশ কীভাবে দিচ্ছে? আমার সকল কাগজপত্র ঠিক আছে দেখেই তো তারা নির্দেশ দিচ্ছে- কিন্তু কলেজ তা মানছে না।

মন্ত্রণালয়-মাউশির দফায় দফায় চিঠি দেয়ার পরও তাকে যোগদান করতে না দেয়ার বিষয়ে নিয়ে জানতে চাইলে হাবিবুল ইসলাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না বলেই তিনি কল কেটে দেন।

এ প্রসঙ্গে মাউশির সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) তপন কুমার বলেন, ‘আমরা যাচাই বাছাই শেষে সাবিনা ইয়াছমিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে পুনর্বহাল করতে চিঠি দিয়েছি। তাকে এই পদে বসতে দিলেই কলেজের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর