রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
তবে নেতৃত্বের এই লড়াইয়ে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। যেখানে একের পর এক পুরুষ শিক্ষার্থী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন, সেখানে নারী প্রার্থীর সংখ্যা এখনো মাত্র দুজন।
আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রাকসু, হল সংসদ ও সিনেটের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নির্বাচন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজারের বেশি ভোটারের প্রায় ৩৯ শতাংশই নারী। কিন্তু প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এ পর্যন্ত নাম ঘোষণা করেছেন কেবল বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী নিশা আক্তার এবং মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আফরিন জাহান।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অথচ অভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে তাদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কমতে শুরু করেছে। সাইবার বুলিং, ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্রহনন এবং অনিরাপদ নির্বাচনী পরিবেশকে এই ভাটা পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন শিক্ষার্থীরা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী নাদিয়া হক মিথি বলেন,
“নারীরা শুরু থেকেই রাকসু নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন, কিন্তু অনেকে এখনো এ সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা রাখেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না।”
একজন নারী শিক্ষার্থী জানান, নির্বাচনে দাঁড়ালেই ব্যক্তিগত ছবি বিকৃত করা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর মন্তব্য ছড়িয়ে দেওয়ার শঙ্কা থাকে। আরেকজন বলেন, “পুরুষ প্রার্থীদের সমালোচনা রাজনীতির ভেতরেই সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু নারী প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তা চলে যায় ব্যক্তিগত জীবনে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, নারী নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। প্রশাসন ‘এন্টি সাইবার বুলিং সেল’ গঠনের আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে অনেকে এখনো প্রার্থিতা নিয়ে দ্বিধায় আছেন।
গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষার্থী ফাহিমা করিম বন্যা বলেন,
“অনেকেই রাকসুর কাঠামো বা কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন না। সচেতনতার অভাব এবং পারিবারিক নিরুৎসাহই তাদের প্রার্থী হতে বাধা দিচ্ছে।”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারহাত তাসনিম বলেন,
“পুরুষ শিক্ষার্থীদের তুলনায় নারীদের জন্য রাকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়া কঠিন। তবে সব বাধা সত্ত্বেও মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে। যারা আসবে, আমরা তাদের সর্বোচ্চ সমর্থন দেব।”
ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বলছে, তারা নারী নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন,
“সাইবার বুলিং শনাক্তের জন্য এখনো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তবে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় একটি প্রতিরোধ সেল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”
রাকসু নির্বাচনে ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভোটাধিকার থাকলেও নারী প্রার্থীর সংখ্যা এখনো হাতে গোনা। অংশগ্রহণ বাড়াতে নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি রাকসু বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এসআর
মন্তব্য করুন: