[email protected] রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২

জাপানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কোটা কাটছাঁটে বিপাকে বাংলাদেশিরা

ভিএফএস -এর দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কবলে জাপানে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২৫ ৩:৫৩ পিএম
আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৫ ৫:২৩ পিএম

✍ বিশ্বের প্রতিটি দেশেই ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ায় সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে থাকে VFS Global Pvt. Ltd. (VFS)। কিন্তু বাংলাদেশে এসে এই প্রতিষ্ঠানটি যেন হয়ে উঠেছে সাধারণ আবেদনকারীদের জন্য এক অভিশাপ। নিয়মিত ভ্রমণ, চাকরি কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশিরা VFS-এর অনৈতিক কার্যক্রম ও সিন্ডিকেট চক্রের কারণে পড়ছেন চরম হয়রানিতে।

বিভিন্ন সময় ভিএফএসএর দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন, মানববন্ধন, প্রতিবাদ হলেও তাতে পরিবর্তন আসেনি। বরং দিন দিন প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মাত্রা বেড়েই চলেছে। 

সিডিউল পাওয়া যেন ‘সোনার হরিণ’ – সিন্ডিকেট ছাড়া সম্ভব নয়!

ভিসা আবেদন করতে হলে প্রথম ধাপ হচ্ছে সিডিউল পাওয়া। অথচ এই সিডিউল পেতেই সবচেয়ে বড় ভোগান্তিতে পড়ছেন আবেদনকারীরা। সাধারণভাবে সিডিউল পাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা দিলেই মুহূর্তে মেলে কাঙ্ক্ষিত সিডিউল।

এই সিন্ডিকেট পরিচালিত হয় VFS-এর ভিতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং বাইরে থাকা একাধিক এজেন্সির মাধ্যমে। সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য সিডিউল রাখা হয় অচল, অথচ তাদের নিজের চক্রের জন্য প্রস্তুত থাকে স্টক করে রাখা শত শত সিডিউল।

জাপান: সততার প্রতীক দেশটিও VFS-এর ফাঁদে:

বিশ্বের অন্যতম সৎ ও নিয়মতান্ত্রিক দেশ জাপান। অথচ ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে যখন জাপানের ভিসা কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয় VFS, তখন থেকেই দেখা যায় জাপানে উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একের পর এক বাধা।

জাপানে পড়তে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট অফ এলিজিবিলিটি (COE)-এর মেয়াদ থাকে মাত্র ৯০ দিন। এই সময়ে ভিসা আবেদন করে জাপানে পৌঁছাতে হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস শুরুর আগেই উপস্থিত থাকতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সিডিউল জটিলতায় শিক্ষার্থীরা সেশন শুরুর এক মাস পরও জাপানে পৌঁছাতে পারছেন না।

এমনকি অনেক COE-র মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভিসা পাওয়ার যোগ্যতাই হারাচ্ছেন।

নেপালের শিক্ষার্থীরা পৌঁছায় সময়মতো, আর বাংলাদেশিরা ঘুরপাক খায় সিডিউলের পেছনে:

নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই জাপানে পৌঁছে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ভিসা আবেদন সিডিউলের জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও কোন অগ্রগতি পাচ্ছেন না। ফলে তাদের শিক্ষা জীবনের শুরুটাই হচ্ছে বাধাগ্রস্ত।

জাপানের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কোটায় কাটছাঁট শুরু করেছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে ভর্তিই বাতিল করে দিচ্ছে।

আগস্টে COE আসার আগেই ‘সিডিউল দখল’, বড় দুই এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ:

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের অক্টোবর সেশনের জন্য আগস্টে COE প্রকাশের আগেই দুটি বড় এজেন্সি VFS-এর সঙ্গে যোগসাজশ করে সিডিউল স্টক করে রেখেছে। যা গত এপ্রিল সেশনে পরতে হয়েছিল এই সমস্যায়, যা আগে কখোনোই পরতে হয়নি, যতদিন জাপান এ্যাম্বেসী থেকে সিডিউল দেওয়া হতো। পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, তারাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে এসব সিডিউল বিক্রি করে দেয়।

এই অনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ না হলে আগামীতে জাপানের শিক্ষাব্যবস্থায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যা দেশের জন্য এক ভয়ানক সংকেত।

রাষ্ট্রদূতের উদ্যোগ ব্যর্থ, সরকারের শক্ত পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি:

জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের কাছে একাধিকবার এই বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর কোন সমাধান আসেনি। এখন সময় এসেছে, বাংলাদেশ সরকারকে এই সিন্ডিকেট ভেঙে সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

না হলে ভবিষ্যতে জাপানসহ অন্যান্য দেশে বাংলাদেশিদের উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়ে যাবে, যা জাতীয়ভাবে হবে এক চরম ক্ষতির কারণ।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর