রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে এক ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস।
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে শিক্ষার্থীরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। তারা হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)
রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন জবি শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার, তাঁতিবাজার হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে গিয়ে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষ হয়।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, চাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ী সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা দেশের মানবিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের করুণ প্রতিচ্ছবি।
রাত ১০টায় রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাবি শাখা ছাত্রদল। মিছিল শেষে রোকেয়া হলের সামনে সমাবেশে তারা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানান এবং দ্রুত বিচারের দাবি করেন।
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, “যে-ই অপরাধ করুক, সে যদি দলেরও হয়, দলীয়ভাবে শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত। অপরাধ ব্যক্তির, দল কখনো অপরাধীদের আশ্রয় দেয় না।”
রাত ১১টায় টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে বুয়েট শিক্ষার্থীরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান এবং পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুন নূর তুষার লিখিত বক্তব্যে বলেন, “চাঁদা না দেওয়ায় একজন মানুষকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও উলঙ্গ করে হত্যা করা হয়েছে—এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাজনক।”
তাদের ৫ দফা দাবি হলো:
১. দ্রুত ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করা।
২. অভিযুক্ত মাহিন, রবিনসহ সবাইকে গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত।
৩. চাঁদাবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা।
৪. রাজনৈতিক পরিচয়ের অপব্যবহার রোধ।
৫. প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা কলেজের হলপাড়া থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। সাইন্সল্যাব, নীলক্ষেত হয়ে কলেজের মূল ফটকে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
শিক্ষার্থীরা রাজনীতিতে চাঁদাবাজি ও সহিংসতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং ‘চাঁদাবাজদের কোনো জায়গা বাংলার মাটিতে হবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দেন।
রাত ১০টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে তারা আগারগাঁও হয়ে ফের ক্যাম্পাসে ফিরে সমাবেশ করেন।
দুই শতাধিক শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরাও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এতে অংশ নেন।
রাত সাড়ে ৯টায় চবির জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিল শুরু হয়। সোহরাওয়ার্দী মোড়, আলাওল ও এএফ রহমান হল হয়ে আবার জিরো পয়েন্টে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
বক্তারা বলেন, “চাঁদার জন্য এভাবে একজন ব্যবসায়ীকে হত্যা ঘৃণ্য অপরাধ। এ ঘটনার বিচার চাই দেশের ছাত্রসমাজ।”
রাত সাড়ে ১০টার দিকে মান্নান হলের সামনে থেকে মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তারা বক্তব্য দেন।
স্লোগান দেন: ‘পাথর মেরে করে খুন, যুবদলের অনেক গুন’, ‘আমার সোনার বাংলায় খুনিদের ঠাঁই নাই।’
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, “দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক প্রভাব, ও চাঁদাবাজির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। আমরা এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি। এখনই সময় নতুন শপথ নেওয়ার।
এসআর
মন্তব্য করুন: