আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির আগেই বিপ্লব স্মরণে আঁকা গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনা নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
নোয়াখালীর সেনবাগ সরকারি কলেজের দেয়ালে আঁকা ‘জুলাই বিপ্লব’ স্মৃতিচিহ্ন গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে কলেজ অধ্যক্ষের সরাসরি নির্দেশে—এমন অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
অনেকেই অভিযোগ করছেন, অধ্যক্ষ এ কে এম সেলিম চৌধুরীর নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের নিজ খরচে আঁকা এসব শিল্পকর্ম মুছে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়।
তবে অধ্যক্ষ সেলিম চৌধুরী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি এ বিষয়ে জানি না। পরে তাকে ছবি ও ভিডিও দেখানোর পর তিনি বলেন, “এটা আমাদের কলেজের দেয়ালের ভিডিও। তবে কে বা কারা মুছে ফেলেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো।
উল্লেখ্য, গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে দেয়ালে দেয়ালে 'জুলাই বিপ্লব' বিষয়ক গ্রাফিতি আঁকেন।
এসব চিত্রে তৎকালীন সরকারের দমননীতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি বর্ষণ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের নির্যাতনের নানা চিত্র তুলে ধরা হয়।
সেনবাগ কলেজেও এমনই একাধিক চিত্রকর্ম সবার নজর কেড়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি অজ্ঞাত কারণে সবগুলো গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়, যা দেখে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা হতবাক। তাঁরা দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে শাস্তি দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে ‘জুলাই আন্দোলন’-এর সামনের সারির নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার যেখানে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় কর্মসূচি নিচ্ছে, সেখানে এমন গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনা দুঃখজনক ও অমার্জনীয়।
এ প্রসঙ্গে নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন সাংবাদিকদের বলেন, “জুলাই গ্রাফিতি যারা মুছে ফেলছে, তারা যেন জুলাইকেই মুছে ফেলতে চায়। অধ্যক্ষ যদি এতে জড়িত থাকেন, তাহলে তাকে দ্রুত বরখাস্ত ও আইনের আওতায় আনতে হবে।
জানা যায়, অধ্যক্ষ সেলিম চৌধুরী ২০২১ সালের ২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কলেজে যোগ দেন এবং সেই সময় থেকেই তিনি নানা অনিয়মে জড়িত। কলেজে নিয়মিত না আসা, কেনাকাটায় আর্থিক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারীভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “প্রিন্সিপাল স্যার আগের মতোই একক সিদ্ধান্তে সব কিছু চালাচ্ছেন। এখনো নিয়মিত কলেজে আসেন না। এতে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।”
তবে এসব অভিযোগ সেলিম চৌধুরী প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “আমি নিয়মিত কলেজে আসি কিনা, তা যাচাই করে দেখা যেতে পারে। আর্থিক অনিয়মের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা অধিদপ্তর বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: