news.protidinerbangla22@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৪ আশ্বিন ১৪৩১

মাউশিতে লিখিত অভিযোগ

জলঢাকার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না

আবদুল হাই তুহিন

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৪ ৮:০৬ পিএম
আপডেট: ২৬ মে ২০২৪ ৮:১৫ পিএম

,


* এক উপজেলায়ই কাটাচ্ছেন ৭ বছর
* ঘুষের টাকা দিতে গিয়ে সর্বশান্ত শিক্ষকরা
* অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা: মাউশি ডিজি

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। কিন্তু সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের অব্যাহত ঘুষ-দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় তা বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। উত্তরের জেলা নীলফামারীর শিক্ষকরা যেন অসহায় হয়ে পড়েছেন একজন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। গত সাত বছর ধরে জলঢাকার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে থাকা চঞ্চল কুমার ভৌমিক টাকা ছাড়া যেন কিছুই বোঝেন না। এই উপজেলার শিক্ষকদের অভিযোগ- নিয়োগ, এমপিওসহ তার দপ্তরে থাকা যেকোনো কাজের জন্য গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। অভিযোগ আছে, দাবি করা টাকা না পেলে আটকে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট ফাইল। ঘুরতে হয় দিনের পর দিন। কিন্তু শেষ পর্যায়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা টাকা দিয়ে কাজ আদায় করলেও নিজেরা হয়ে পড়েন সর্বশান্ত।
এমন পরিস্থিতিতে এই কর্মকর্তার হাত থেকে রক্ষা পেতে জলঢাকার একাধিক কলেজ, স্কুল, মাদরাসার প্রধানরা দারস্থ হয়েছেন মাউশিতে। মাউশির মহাপরিচালকের কাছে দেয়া অভিযোগপত্রে অবিলম্বে এই কর্মকর্তার বদলির দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। চাকুরিবিধি অনুযায়ী, ৩ বছরের অধিক সময় এক স্টেশনে থাকতে পারবেননা কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী। দীর্ঘ সাত বছরে কম করে হলেও দুবার বদলি হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।
এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। মাউশির মহাপরিচালক বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে মাউশিতে অভিযোগ জমা পড়ার ঘটনা শুনে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা চঞ্চল কুমার ভৌমিক।
তিনি বলেন, ‘আমার চেয়ে ভালো কর্মকর্তা এই বিভাগে আছে বলে মনে হয় না। ঢাকায় কোনো অনুষ্ঠান হলে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি নিশ্চয়ই দক্ষ-সৎ বলে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এই প্রথম শুনলাম।’
দীর্ঘ সাতবছর ধরে একই উপজেলায় কর্মরত কিভাবে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মাঝে একবার বদলি করা হয়েছিল। সেটা থামিয়ে দিয়েছি। অলমোস্ট শিক্ষার সবাই আমাকে চিনেন। খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে বিভাগে আমার পরিচয় আছে।’
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অসাধু কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী ঘুষ দিতে বাধ্য হন শিক্ষকরা। অপারগতা প্রকাশ করলে উল্টো হয়রানির মুখে পড়তে হয় শিক্ষকদের। খোদ মাউশির মহাপরিচালকও এক বক্তব্যে অসাধু কর্মকর্তাদের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মাউশিতে জলঢাকা উপজেলার চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান মহাপরিচালক বরাবর এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগকারী শিক্ষকরা হলেন- গোলনা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হোসাইন আহমাদ, উত্তর দেশীবাই ফয়জুল উলুম দাখিল মাদরাসার সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, রশিদপুর বালিকা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহিদুল ইসলাম ও বালাপাড়া দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসার সুপার মো. সাইদুল ইসলাম।
যা আছে লিখিত অভিযোগপত্রে -
শিক্ষা কর্মকর্তার হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আকুতি জানিয়ে শিক্ষকরা অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, চঞ্চল কুমার ভৌমিক ২০১৭ সালের ২৫ মে জলঢাকা উপজেলায় যোগদান করেন। দীর্ঘদিন একই উপজেলায় কর্মরত থাকায় সর্বত্র তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের হুমকি, সামান্য কাজের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবী করেন। বিশেষ করে নতুন শিক্ষকদের এমপিও ফাইল পাঠানোর জন্য প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মোটা অংকের টাকা প্রদানে বাধ্য করেন। সাধারণ শিক্ষকরা নিরুপায় হয়ে এই টাকা দিতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়ছেন।
এতে আরও বলা হয়, কর্মকর্তার অফিসে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন ও বিভিন্ন রকমের ধমক প্রদান করেন। দীর্ঘ ৭ বৎসর একই কর্মস্থলে থাকার ফলে তাহার বেপরোয়া আচরণে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা ভুগতেছেন। তাই এই কর্মকর্তাকে অন্যত্র দ্রুত বদলীর ব্যবস্থা করে জলঢাকা উপজেলার শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যেখানকার শিক্ষকরা ভুয়া, পেছনের তারিখে নিয়োগ দেখিয়ে এমপিও করার আবেদন নিয়ে আসেন সেগুলো নিয়ম বহির্ভুত বলে না করায় তারা এসব অভিযোগ দিতে পারেন। কাজের বিনিময়ে টাকা পয়সা নেয়ার বিষয়ে আমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। তবে নীলফামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগকে কেন্দ্র করে আর্থিক লেনদেন হয় বলে প্রতিবেদকের কাছে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর