news.protidinerbangla22@gmail.com বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৪ আশ্বিন ১৪৩১

বিসিএস শিক্ষা সমিতির নির্বাচন

নিজের প্যানেল জেতাতে শিক্ষকদেরকে চাপ দিচ্ছেন শাহেদুল খবির

সাইদুর রহমান

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৪ ২:১৭ পিএম

,

 

★ এসিআরের ভয়ে অধ্যক্ষরা বাধ্য হচ্ছেন গ প্যানেলে কাজ করতে
★ কলেজের অধ্যক্ষদের অফিস আদেশে কমিটি গঠন
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির হেভিওয়েট নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ৯ জুন। দেশের সব শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা ভোট দিয়ে দুই বছরের জন্য তাদের সংগঠনের নেতৃত্ব বাছাই করবেন। তবে এই নির্বাচনকে ঘিরে একাধিক প্যানেল মাঠে সক্রিয় থাকলেও কারও কারও বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের নির্বাচনে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করার অভিযোগ দিনদিন জোরালো হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, প্যানেলের শীর্ষ পদে নির্বাচন করা শিক্ষা কর্মকর্তারা অধ্যক্ষরা যাতে অন্য সহকর্মীদের দিয়ে তাদের পক্ষে কাজ করান সে জন্যও চাপ দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে একাধিক অধ্যক্ষ কলেজের প্যাডে অফিসে আদেশের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য কমিটি গঠন করে চিঠি দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এসব চিঠি। যা নিয়ে ইতোমধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে শিক্ষা ক্যাডারসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও।
এমন একাধিক চিঠি প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এতে দেখা গেছে, গত ১৯ মে নির্বাচনের ‘গ’ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করে অফিস আদেশ জারি করেন গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ।
৮ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমানকে। বাকি সদস্যরা হলেন- পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মো. ফয়েজ আলম, ব্যবস্থাপনা বিভাগের হাচান ইমাম ও ফখরুজ্জামান, বাংলা বিভাগের প্রদীপ ভক্ত, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মো. ওয়ালীউল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের মো. সাইফুল ইসলাম, ইতিহাস বিভাগের আতিকুর রহমান।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ওহিদ আলম লস্কর স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এই কমিটিতে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ওহিদ আলম লস্কর সাংবাদিকদের বলেন, অফিস আদেশটি ভুলবশ:ত দেয়া হয়েছে। এটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচনের ‘গ’ প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী।
অন্যদিকে একই ধরণের চিঠি দেয়া হয়েছে সরকারি সিরাজগঞ্জ কলেজ থেকে। যেখানে গ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনার জন্য ঢাউস কমিটি করা হয়েছে। যেখানে আহ্বায়ক করা হয়েছে প্রফেসর মো. শরীফ উস সাঈদকে। আর সমন্বয়ক করা হয়েছে মো. শফিকুল ইসলাম তালুকদারকে।
৬১ সদস্য এই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বাইরে ৮ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদও করা হয়েছে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের পক্ষ থেকে। এছাড়া রাজবাড়ি জেলা শাখার পক্ষ থেকে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির প্যাড ব্যবহার করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কথা জানানো হয়েছে। রাজবাড়ি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও সংগঠনের সভাপতি হোসনেআরা খাতুন ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস. এম সামসুজ্জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ১১ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংগঠনের এমন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অফিস আদেশ জারি করার কোনো নিয়ম নেই। যা সরকারি চাকরিবিধিরও পরিপন্থী। ‘গ’ প্যানেলের প্রভাবশালী শিক্ষা কর্মকর্তাদের চাপের মুখে এমনটা করা হচ্ছে বলেও একাধিক অধ্যক্ষ জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বর্তমান মহাসচিব শওকত হোসেন মোল্যা বলেন, ‘এমন করে অফিস আদেশ করে কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্যাডে সরকারি কলেজের কোনো শিক্ষক চিঠি দিতে পারেন না। এটি
চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একাধিক কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, সব সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) এর দায়িত্ব মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরীর হাতে।

ফলে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজেদের সমস্যার মুখোমুখি যাতে হতে না হয় সেজন্য সবসময় চাপ অনুভব করেন। আর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই প্যানেল থেকে বাড়তি চাপ প্রয়োগ করার বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট। ফলে নিয়মে না থাকলেও একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে এমন অফিস আদেশ জারি করে গ প্যানেলের পক্ষে কাজ করা হচ্ছে।

তবে বিষয়টি নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চান না শিক্ষকরা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বহু প্রতীক্ষিত নির্বাচন। দুই বছর মেয়াদে সমিতির সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০২২ সালে। ৯৫ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটির নেতা নির্বাচিত করতে সমিতির ১৫ হাজারের বেশি সদস্য তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন এই নির্বাচনে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, ইলেকশন আসলেই সব সময় প্রতিপক্ষের লোকজন নানা অভিযোগ দিয়ে থাকেন, এর কোন ভিত্তি নেই। কোন শিক্ষক বা প্রিন্সিপালকে ভয় দেখানোর কোন নজির নেই। নির্বাচনে কোনো ধরনের ভয় ভীতি দেখানোর সুযোগ নেই। পছন্দের প্রার্থীকে সবাই ভোট দিতে পারেন।
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় ৩শ' কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। সারাদেশের ৯টি শিক্ষা অঞ্চলে কমর্রত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাসহ সরকারি কলেজ শিক্ষক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), শিক্ষাবোর্ড, নায়েম, টিটি কলেজ, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে কর্মরত ক্যাডার কর্মকর্তারা এবাবের নির্বাচনে ভোট দিবেন।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর