দলমত নির্বিশেষে দেশের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং বিদেশি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
হাসনাত বলেন, “এটি স্বাভাবিক যে, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে নীতিগত মতপার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু দেশের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং বিদেশি আগ্রাসনের প্রশ্নে কোন আপস করা যাবে না। আমাদের ঐক্য বজায় রেখে এই পথ অতিক্রম করতে হবে।”
বুধবার বিকালে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট আয়োজিত 'বিপ্লবোত্তর ছাত্র ঐক্য' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং প্রেসক্লাবের সভাপতি সুবর্ণ আসসাইফ, এবং সভায় সভাপতিত্ব করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল হাসান তানভীর।
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, “ফ্যাসিস্টদের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া যাবে না। যদি আমরা এবার ব্যর্থ হই, তবে বাংলাদেশ আর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে।”
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, “যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করা হবে। শহিদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, এবং এই বিজয় যেন চিরকাল জীবন্ত থাকে, সেই দোয়া আল্লাহর কাছে করছি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত জবি শিক্ষার্থী শহিদ একরামুল হক সাজিদের বোন ফারজানা হক বলেন, “আমার মা এখনও সাজিদের কাপড় বুকে নিয়ে ঘুমায়। আমি আমার ভাই হারিয়েছি, আমার মতো অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ যেন বৃথা না যায়। এজন্য আমরা সবাইকে একত্রিত হতে আহ্বান জানাচ্ছি।”
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, “যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের ভুলে যাবেন না। যারা বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতদিন থাকবে, ততদিন বাংলাদেশে বিশ্বজিৎ ও সাজিদের নাম স্মরণীয় থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা আদর্শের কথা বলেন, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার করবেন না। তাহলে আপনারা ছাত্রলীগের মতো হয়ে যাবেন। ছাত্রদল অনেক কিছু ত্যাগ করেছে এবং সামান্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, “ছাত্র রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য ছাত্রদের জন্য কাজ করা হওয়া উচিত। যারা তা করবে না, তাদের ছাত্ররা গ্রহণ করবে না। শিক্ষায় সংস্কার না হলে বারবার দিল্লির দাসত্ব করতে হবে। তাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছি।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা কাজ করুন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। দরকার হলে আবার জীবন দেব, রক্ত দেব। আমাদের ঐক্যের দিকে এগোতে হবে, কাউকে পেছনে ফেলে রাখবেন না।”
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, “ভারতীয় মিডিয়া নির্লজ্জভাবে মিথ্যাচার করেছে, তার নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা ভারতের দাসত্বের জন্য লড়াই করি নি, আমরা ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবতার জন্য সংগ্রাম করেছি।”
জবি ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম বলেন, “গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ গত ১৫ বছরে ছাত্রদল আন্দোলনে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। আওয়ামী দুঃশাসনে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের আমরা ভুলব না।”
সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুল হাসান তানভীর সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই ঐক্য যেন অটুট থাকে, তার জন্য আমাদের সকলকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।”
অনুষ্ঠানটি কুরআন তিলাওয়াত, গীতা পাঠ এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।
এসআর
মন্তব্য করুন: