বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যে জাতির স্বাধীনতার জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই জাতিরই একদল বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে—যা ইতিহাসে বিরল এক বর্বরোচিত অপরাধ।
দুঃখজনকভাবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী দাবি করা আওয়ামী লীগও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরে গেছে। বিশেষ করে গত দেড় দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থেকে দলটি ভোটাধিকার সংকুচিত করেছে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে এবং বিরোধী মত দমনে সহিংসতা ও অসহিষ্ণুতার পথ বেছে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে এই অপশাসন ও দমননীতি শেষ পর্যন্ত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানকে অনিবার্য করে তোলে। তবে এর দায় কোনোভাবেই ১৯৭৫ সালে নিহত জাতির জনকের ওপর বর্তায় না।
এটিও সত্য যে, ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জোরপূর্বক প্রদর্শনের সংস্কৃতি চালু করেছিল। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান চলাকালে বা পরবর্তী সময়ে তাঁর স্মৃতি বা স্মারকের অবমাননা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিশেষত, ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন ভাঙচুর—জাতির ইতিহাস ও স্মৃতির ওপর আঘাত। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার যেকোনো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গ্রাম থেকে উঠে এসে শেখ মুজিবুর রহমান একদিনে ‘বঙ্গবন্ধু’ হননি। দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার জন্য তাঁর আজীবন ত্যাগ এবং দৃঢ় নেতৃত্ব তাঁকে জাতির অবিসংবাদিত নেতা ও স্বাধীন বাংলাদেশের মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত করেছে।
দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাঁর আত্মত্যাগ আগামী প্রজন্মের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধু কেবল একটি দলের নয়—তিনি পুরো দেশের, মুক্তিকামী সব মানুষের নেতা। এমনকি গত বছরের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানেও তাঁর বাণী আন্দোলনকারীদের প্রেরণা জুগিয়েছে।
এখন প্রয়োজন, আনুষ্ঠানিকতা ও রাজনৈতিক ফায়দা তোলার বাইরে গিয়ে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নেওয়া। মাত্র ৫৫ বছরের জীবনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ কারাগারে কাটানো বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা যেকোনো প্রজন্মের জন্য অনুসরণযোগ্য উদাহরণ।
বিশেষ করে বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শে ফিরে যাওয়ার ওপর। ইতিহাস প্রমাণ করে, অপশাসন ও গণতন্ত্রহীনতা শেষ পর্যন্ত পতন ডেকে আনে। আর আজ যারা এই মহান নেতার স্মরণে শোক প্রকাশে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত—একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় তাঁদেরও দাঁড়াতে হবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: