বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে—যা আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগজনক বার্তা বহন করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও লুটপাটের কারণে বিপুল পরিমাণ ঋণ ঝুঁকিতে পড়েছে। খেলাপি ঋণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতি বাড়তে বাড়তে মূলধন ঘাটতি এখন নতুন সংকট তৈরি করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে মোট মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৬ কোটি টাকা। মার্চ শেষে ঘাটতি ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। নতুন করে এনআরবিসি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ঘাটতির তালিকায় যুক্ত হয়েছে; তবে বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংক ঘাটতি থেকে বেরিয়ে এসেছে।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ৫ শতাংশ; এখন তা বেড়ে সাড়ে ২৮ শতাংশ হয়েছে। ফলে বিশাল অঙ্কের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হওয়ায় মূলধন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকৃত চিত্র প্রকাশের পর পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল ঋণ দেওয়া হলেও সেগুলো খেলাপি হিসেবে দেখানো হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব গোপন খেলাপির তথ্য উন্মোচিত হয়। বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে—যার বিপরীতে প্রয়োজনীয় প্রভিশন গঠন করতে না পেরে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুযায়ী, জুন শেষে ব্যাংক খাতে মূলধন-ঝুঁকিজনিত সম্পদের অনুপাত (সিআরএআর) নেমে দাঁড়িয়েছে ৪.৪৭ শতাংশ—যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম হওয়া উচিত ১০ শতাংশ। মার্চ শেষে এই অনুপাত ছিল ৬.৭৪ শতাংশ।
চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, ১০টি বেসরকারি ব্যাংক, আটটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক এবং দুটি বিশেষায়িত ব্যাংক বর্তমানে মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: