[email protected] বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫
২১ কার্তিক ১৪৩২

টানা ৩ মাস রপ্তানি আয় নিম্নমুখী, অক্টোবরে কমলো ৭.৪৩ শতাংশ

প্রতিদিনের বাংলা ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ নভেম্বর ২০২৫ ৬:২৩ পিএম

দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমে ধীরগতি থাকলেও কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে তিন মাসেই রপ্তানি আয়ে পতন ঘটেছে। সর্বশেষ অক্টোবরে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা আগের স্বস্তিকে এখন উদ্বেগে রূপ দিচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ৩৮২ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই মাসে এই অঙ্ক ছিল ৪১৩ কোটি ৮ লাখ ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর আগেও সেপ্টেম্বর ও আগস্ট মাসে রপ্তানি আয় হ্রাস পেয়েছিল।

সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি খাতে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যায়। এই এক মাসের বড় প্রবৃদ্ধির কারণে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সামগ্রিক রপ্তানি আয় এখনও ইতিবাচক থাকলেও প্রবৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ২ দশমিক ২২ শতাংশে।

বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে গেলেও সে মাসে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী তিন মাসে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও রপ্তানি আয় না বাড়া বরং কমে যাওয়া উদ্বেগজনক।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে জুলাই ও আগস্টে রপ্তানি খাতে চাপ ছিল। সেপ্টেম্বরে তার প্রভাব কিছুটা বজায় থাকলেও অক্টোবরে এত বড় হারে রপ্তানি কমে যাওয়া নিঃসন্দেহে উদ্বেগের বিষয়।”

খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। টানা তিন মাস এই খাতে রপ্তানি কমেছে। জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল, কিন্তু আগস্টে কমে প্রায় ৫ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে সাড়ে ৫ শতাংশ, আর অক্টোবরে কমেছে ৮ শতাংশ। অক্টোবরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০২ কোটি ডলার।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। জুলাই-অক্টোবরে এ খাতে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি কিছুটা কমেছে। এ সময় ৩৮ কোটি ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২ শতাংশ কম। শুধু অক্টোবরে রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

হোম টেক্সটাইল খাতে অক্টোবর মাসে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত মিলেছে। অক্টোবরে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে প্রথম চার মাসে ২৮ কোটি ডলারের রপ্তানি হয়েছে, যা আগের সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।

এছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিও ইতিবাচক ধারায় আছে। প্রথম চার মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। শুধু অক্টোবরে ৮ কোটি ডলারের পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর