[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
৮ কার্তিক ১৪৩২

নির্বাচিত সরকার ছাড়া আইএমএফ ছাড়বে না পরবর্তী কিস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ৪:০৬ পিএম

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ কর্মসূচির ষষ্ঠ কিস্তি ডিসেম্বরের শেষে বা আগামী জানুয়ারির প্রথমার্ধে ছাড় হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আইএমএফের দেওয়া শর্তগুলো মেনে চলবে কি না—সে বিষয়ে নিশ্চয়তা না পেয়ে আপাতত কিস্তির অর্থ ছাড়ে রাজি নয় সংস্থাটি।

ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

ডলার সংকট মোকাবিলায় আগের আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। পরবর্তীতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সংস্থাটির সঙ্গে আরও ৮০০ মিলিয়ন ডলারের নতুন চুক্তি হয়। ফলে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত পাঁচ কিস্তিতে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। ষষ্ঠ কিস্তি পাওয়ার কথা ডিসেম্বরের শেষে এবং সপ্তম কিস্তি আগামী জুনে।

প্রথা অনুযায়ী, প্রতিটি কিস্তি ছাড়ের আগে আইএমএফের একটি মূল্যায়ন মিশন দুই সপ্তাহ বাংলাদেশে অবস্থান করে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি যাচাই করে। সেই মিশন আগামী ২৯ অক্টোবর ঢাকায় আসছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ীই পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে সংস্থাটি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ষষ্ঠ কিস্তির পূর্বশর্তগুলোর মধ্যে কেবল রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। অন্য সব শর্তই পূরণ হয়েছে। তবুও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে কিস্তি ছাড় বিলম্বিত হতে পারে।

ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, “আমরা সব শর্ত পূরণ করেছি। তবু আইএমএফ নির্বাচনের পর নতুন সরকার শর্তগুলো মানবে কি না—তা নিশ্চিত হওয়ার পরেই কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নেবে।”

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আইএমএফ ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী মার্চ বা এপ্রিল নাগাদ কিস্তি ছাড় করতে পারে।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ষষ্ঠ কিস্তিতে বাংলাদেশের পাওয়ার কথা প্রায় ৮০ কোটি ডলারের বেশি। যদিও অর্থ ছাড়ে বিলম্ব হলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১৬ শতাংশ, আর রপ্তানি আয়ও জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গড়ে ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। একই সঙ্গে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে এবং বকেয়া ঋণ কমে এক অঙ্কে নেমে এসেছে। ফলে রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার ২১৪ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই স্থিতিশীলতা বিবেচনায় আইএমএফের কিস্তি বিলম্বিত হলেও তাৎক্ষণিক কোনো আর্থিক সংকটের আশঙ্কা নেই।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় ২০২২ সালের শেষ দিকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আইএমএফের কাছে সহায়তা চায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংস্থাটি ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে, যা পরবর্তীতে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পাঁচ কিস্তিতে ৩.৬ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর