[email protected] রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫
২০ আশ্বিন ১৪৩২

অর্ধশিক্ষিত কর্মীদের কারণে ইসলামী ব্যাংকের ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৫৭ এএম

সংগৃহীত ছবি

এস আলম গ্রুপের প্রভাবাধীন ব্যবস্থাপনায় অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অদক্ষ ও অর্ধশিক্ষিত কর্মীদের কারণে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক—ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি (আইবিবিএল)—প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

সাত বছরে এসব নিয়োগের পেছনে ব্যাংকটির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। খবর ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)।

সূত্র জানায়, কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা বা যোগ্যতা যাচাই ছাড়াই এস আলম-সংশ্লিষ্ট তৎকালীন ব্যবস্থাপনা প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ৮ হাজার ৩৪০ জনকে নিয়োগ দেয়। অভিযোগ রয়েছে, এসব নিয়োগে বিপুল অর্থ লেনদেন হয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই পূর্বে পানের দোকানদার, গৃহকর্মী, অটোরিকশা চালক, রাজমিস্ত্রির সহকারী কিংবা রংমিস্ত্রী ছিলেন।

এই অনিয়মিত নিয়োগের ফলে ব্যাংকটির প্রতি বছর প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হচ্ছে। পাশাপাশি, ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগও রয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে।

ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসলামী ব্যাংকের অবৈধ নিয়োগ ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় শুধু প্রতিষ্ঠানটি নয়, বরং পুরো ব্যাংক খাতই গভীর সংকটে পড়েছে।

বর্তমান ব্যবস্থাপনা এসব নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা যাচাই শুরু করলে দেখা যায়, অনেকে জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন। ইতিমধ্যে এমন প্রমাণ মেলায় বেশ কয়েকজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এবং সার্টিফিকেট যাচাই প্রক্রিয়া এখনও চলমান।

সম্প্রতি পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ পরীক্ষা নেয়। অভিযোগ, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মকর্তা সেই পরীক্ষা বর্জন করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যাংকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, সংবাদ সম্মেলন ও হুমকি দেওয়ার পথেও হাঁটছেন।

গত শুক্রবার ভোরে ইসলামী ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ হ্যাক হওয়ার ঘটনাটিও এ প্রেক্ষাপটে ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, এর পেছনে ‘বাইরের শক্তির’ ইন্ধন রয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এক পরিচালক বলেন, “এই বিদ্রোহী কর্মীদের হাতে গ্রাহকের আমানত নিরাপদ নয়। ব্যাংকের ভল্ট ও ক্যাশ কাউন্টার সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে।”

গত সাত বছরে অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগ ও আঞ্চলিক প্রভাবের কারণে ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকসেবার মান চরমভাবে অবনতি ঘটেছে। ব্যাংকটি এখন কার্যত একটি আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যেখানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্মীদের প্রভাব বেশি।

এক সাবেক পরিচালক বলেন, “অফিসে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা, অদক্ষতা ও উদ্ধত আচরণের কারণে ব্যাংকের যে আন্তর্জাতিক মানের সুনাম ছিল, তা আজ তলানিতে নেমে গেছে। গ্রাহকদের আস্থা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।”

ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এস আলম-সমর্থিত তৎকালীন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের পেশাগত দক্ষতা ছিল না। তারা এস আলমের নাম ব্যবহার করে সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন, ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা অমান্য করতেন এবং পছন্দসই এলাকায় বদলি নিশ্চিত করতেন।

যেসব কর্মকর্তা তাদের শৃঙ্খলায় আনতে চেয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বদলি বা বরখাস্ত করা হয়েছে। এখনো অনেকেই আগের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, “এস আলম একাই দেশের পুরো ব্যাংক খাতের ক্ষতি করেছেন।

অবৈধ নিয়োগ, অদক্ষ জনবল ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি আজ এক গভীর সংকটে। প্রায় এক দশক ধরে চলা এই অনিয়ম শুধু প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ক্ষতিই বাড়ায়নি, বরং পুরো ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থাকেও নাড়িয়ে দিয়েছে।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর