ঈদের পর থেকে দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হঠাৎ করে আবারও লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে।
চাল, আলু, পেঁয়াজ, সবজি ও মুরগির মতো মৌলিক খাদ্যপণ্যের দামে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আয় না বাড়লেও খরচ বেড়েই চলেছে, যার ফলে ভোক্তারা পড়েছেন দিশেহারা অবস্থায়।
বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে বেশি অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে চালের দামে। সরু মিনিকেট চালের দাম খুচরা বাজারে এক লাফে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এক মাস আগে যা ছিল ৮০ টাকার নিচে, এখন তা মানভেদে ৮২ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মোটা চাল ব্রি-২৮ এর দামও ৩ থেকে ৭ শতাংশ বেড়ে এখন কেজি প্রতি ৬০-৬২ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারেও দাম বাড়াতে হচ্ছে। চালকল মালিকরা ধানের সংকট ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কথা বললেও বাজার সংশ্লিষ্টদের দাবি, মূল কারণ হল অসাধু মজুদদার ও কিছু করপোরেট চাল ব্যবসায়ীর কৃত্রিম সংকট তৈরি করা।
সবজির বাজারে পণ্যের দাম এক মাসে ২৫% থেকে ১৩৩% পর্যন্ত বেড়েছে। মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকায়, যা আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। করলা, বেগুন, বরবটি ও পটোলের দামও বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত। করলার কেজি এখন ৮০-১০০ টাকা, বেগুনও একই দামে বিক্রি হচ্ছে।
ঈদের পর মাত্র তিন সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম ২০% পর্যন্ত বেড়ে এখন ৩০ টাকা কেজি। দেশি পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগের তুলনায় ১০% বেশি।
সোনালি মুরগির কেজি প্রতি দাম ১২-১৪% বেড়ে বর্তমানে মানভেদে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা হয়েছে। যদিও ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে (১৬০-১৭০ টাকা), তবে সাধারণ মানুষের জন্য এখন সোনালি মুরগি অনেকটাই ‘লাক্সারি’ পণ্য হয়ে উঠেছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে দেখা যায়, অনেকেই পণ্যের দাম শুনে হতবাক হয়ে পড়ছেন। এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন,
“ঈদের আগে মিনিকেট চালের ২৫ কেজির বস্তা ১৮৭৫ টাকায় কিনেছিলাম, এখন সেটা ২১২৫ টাকা। কোনো কিছু না কিনেই ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আয় তেমন বাড়েনি, সংসারের খরচ মেটানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।”
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মো. সায়েম বলেন,
“মৌসুম চলাকালেই ৫০ কেজির চালের বস্তায় ৪০০ টাকা দাম বেড়েছে। সাধারণত মৌসুমের শেষদিকে এমন হয়, কিন্তু এখন হঠাৎ এক লাফে ৮ টাকা কেজিতে বাড়ার নজির নেই।”
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন,
“চালের বাজারে অস্থিরতা রোধে সরকারকে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। খোলা বাজারে চাল বিক্রি বাড়াতে হবে। মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে, না হলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে।”
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধি করছে। সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ধারাবাহিকতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এর নেতিবাচক প্রভাব ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে।
বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য হারিয়ে সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণে জোরালো ও টেকসই ব্যবস্থা না নিলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিকেও ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: