দুর্বল ১২টি ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গ্যারান্টি ও বিশেষ সুবিধার আওতায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এ সহায়তা দেওয়া হয়। তবে বিপুল অর্থ সহায়তার পরও ব্যাংকগুলোর অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, ঈদের মাত্র দুই কার্যদিবস আগেও পাঁচটি ব্যাংককে ৩ হাজার কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হয়।
এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক ১ হাজার কোটি, এবি ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পায় ৫০০ কোটি করে।
এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়।
এতে ব্যাংকগুলো ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করা হলেও বাস্তবে সেগুলো এখনো তারল্য সংকটে ভুগছে। গ্রাহকেরা টাকা তুলতে ব্যাংকে গিয়ে ফিরে আসছেন, ব্যাংকগুলো নগদ অর্থ দিতে পারছে না।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জামানত ছাড়াই বিপুল অঙ্কের টাকা ধার দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। তবু গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও স্বচ্ছতার অভাবে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৯ নভেম্বর গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন, ছয়টি দুর্বল ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার গোপন সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজনে আরও দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো হচ্ছে—ন্যাশনাল ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টিতে মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি, ডাচ্-বাংলা, বেঙ্গল ও সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এসব দুর্বল ব্যাংককে আরও ১ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়।
গত নভেম্বরেও নতুন করে ৬,৫৮৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ১,১৭৫ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ১,০০০ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি টাকা পায়।
এইভাবে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা পেলেও ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য আগের মতোই নাজুক, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বারবার টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক বাঁচানোর চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতিসহ আরও বড় অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে।
এসআর
মন্তব্য করুন: