দীর্ঘ দুই বছর পর বাংলাদেশ আবারও ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অতিক্রম করেছে।
আন্তর্জাতিক ঋণ সহায়তা এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে এই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান গণমাধ্যমকে জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর ঋণ সহায়তার অর্থ যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ বেড়েছে।
তিনি জানান, আইএমএফ-এর দুটি কিস্তিতে এসেছে ১.৩৪ বিলিয়ন ডলার, এডিবির কাছ থেকে এসেছে ৯০০ মিলিয়ন ডলার এবং জাইকার ঋণ সহায়তাও যুক্ত হয়েছে এই রিজার্ভে। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০.৫১ বিলিয়ন ডলার।
নতুন হিসাব অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, আইএমএফের ব্যালেন্স অব পেমেন্টস ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী নিট রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। তবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ, যা আকুর বিল, বাণিজ্যিক ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা এবং আইএমএফের এসডিআর ফান্ড বাদ দিয়ে হিসাব করা হয়, তা এখনও ২০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে অবস্থান করছে। এই রিজার্ভ দিয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানির ব্যয় সামলানোর সক্ষমতাই যথেষ্ট ধরা হয়।
বৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব
সরকার পরিবর্তনের পর প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে আরও বেশি অর্থ পাঠাতে শুরু করেছেন, যার ফলে প্রবাসী আয়ে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিগত ১০ মাস রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। ব্যাংক ও রাজস্বখাতে সংস্কার এবং বাজেট সহায়তা বাবদ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ৫০০ কোটির বেশি ডলার এসেছে দেশে।
পেছনের প্রেক্ষাপট
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। তবে পরবর্তীতে কোভিড-পরবর্তী আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অর্থপাচার, টাকার অবমূল্যায়ন এবং চলতি হিসাবের বড় ঘাটতির কারণে রিজার্ভ দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। তখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০২২ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ সরকার আইএমএফ-এর কাছে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা চায়।
বিশ্লেষকদের মত
খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রিজার্ভে এই ঊর্ধ্বগতি বাজারে স্থিতিশীলতা আনার পাশাপাশি বিনিয়োগ ও আমদানি খাতে আস্থা বাড়াবে।
এসআর
মন্তব্য করুন: