[email protected] শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫
১৩ বৈশাখ ১৪৩২

নিয়ম ভেঙে কনসালটেন্টকে ৩ দফা নিয়োগ পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১২:১৭ এএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১২:১৯ এএম

কনসালটেন্ট মো. ইসমাইল মিয়া

সরকারি সিদ্ধান্ত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালাকে অগ্রাহ্য করে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে একাধিকবার একই ব্যক্তিকে কনসালটেন্ট পদে নিয়োগ দিয়ে আসছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ব্যাংকটির কনসালটেন্ট মো. ইসমাইল মিয়াকে তিনবার পুনঃনিয়োগ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রাখা হয়েছে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ নীতিমালার পরিপন্থী।

অভিযোগ আছে, বিগত আমলের চেয়ারম্যান ও এমডির আর্থিক বিভিন্ন খাত থেকে সুবিধা নেয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন কনসালটেন্ট মো. ইসমাইল মিয়া।

যে কারণে বারবার তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। যদিও এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষায় বারবার গুরুতর আপত্তিও ছিলো। একইসঙ্গে তার বেলায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন এন্ড পলিসি ডিভিশনের (বিআরপিডি) দেয়া নিয়মও মানা হয়নি।

সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে কৃষি ব্যাংকের সাবেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল মিয়াকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরপর মেয়াদ শেষে আরও তিন দফা পুনঃনিয়োগ পান তিনি। বর্তমানে তার মেয়াদ আগামী এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় পরামর্শক পদে পুনঃনিয়োগের সুযোগ নেই।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অধিকাংশ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল হলেও ইসমাইল মিয়ার পদে এর প্রভাব পড়েনি। বরং অভিযোগ রয়েছে, সাবেক এমডি শেখ মো. জামিনুর রহমানের ঘনিষ্ঠতার কারণে তার পুনঃনিয়োগ ও দায়িত্বপ্রাপ্তির বিষয়গুলো সহজ হয়েছে।

ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, কনসালটেন্টের দায়িত্ব পেয়ে ইসমাইল মিয়া ব্যাংকের একাধিক দপ্তরের দৈনন্দিন কাজেও জড়িত ছিলেন।

যদিও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা হিসেবে এসব দায়িত্ব পালন করার সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, তিনি ইনসেনটিভ বোনাসও গ্রহণ করেছেন, যা অন্যান্য চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তারা পাননি।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, তার কার্যপরিধিতে বোর্ড সচিবের দায়িত্ব থেকে শুরু করে সিবিএস বাস্তবায়ন, এইচআরএম মডিউলসহ প্রায় এক ডজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত ছিল। এমনকি ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগের রুটিন দায়িত্বও তিনি পালন করতেন।

একজন ব্যাংক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলেও ইসমাইল মিয়া নিয়মিত কর্মকর্তার মতো সব সুবিধা নিয়েছেন। ইনসেনটিভ বোনাসও নিয়েছেন, যদিও নিয়ম অনুযায়ী তা পাওয়ার কথা নয়।"

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন বলেন, “পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক নন-সিডিউল ব্যাংক হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে না। তবে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে।”

এ বিষয়ে কনসালটেন্ট মো. ইসমাইল মিয়া বলেন, "আমি নিজে কোনো প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ নিইনি। আবেদন করেছি, সিদ্ধান্ত দিয়েছে বোর্ড। আমি বলেছি, নতুন করে মেয়াদ না বাড়ালেই ভালো হয়।"

এমন পুনঃনিয়োগ ও সুবিধা পাওয়া নিয়ে ব্যাংকের অভ্যন্তরে ক্ষোভ থাকলেও কর্তৃপক্ষ এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। রাজনৈতিক প্রভাব ও নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে এই নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা চলছেই। 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর