বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাত নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
বিশেষ করে, ব্যাংক খাতে দুর্বলতা, ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক উঠেছে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সমস্যা গঠনে বিভিন্ন সময়ের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা ভূমিকা রেখেছেন।
বিশেষ করে সাবেক তিন গভর্নর—ড. আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়কালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, তাদের শাসনামলে ব্যাংক খাতের দুর্বলতা বাড়তে থাকে, নীতিমালা শিথিল করা হয় এবং রাজনৈতিক প্রভাব বাড়তে থাকে, যার ফলে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আতিউর রহমানের সময়ে শুরু হয় দুর্বলতা
ড. আতিউর রহমান ২০০৯ সালের মে মাস থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। তার সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাত দুর্বল হতে থাকে।
বিশেষ করে ঋণখেলাপিদের সুবিধা দেওয়ার নীতিমালা, ব্যাংক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার শিথিলতা এবং সাইবার নিরাপত্তায় গাফিলতির কারণে অর্থনৈতিক সংকটের ভিত্তি তৈরি হয়। এই সময়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসে, যার মধ্যে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে।
ফজলে কবিরের সময়ে জালিয়াতির দায় এড়ানোর প্রবণতা
২০১৬ সালে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন ফজলে কবির। তার সময় ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংক লুটপাট ও ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়তে থাকে, তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে সংকট আরও প্রকট
২০২২ সালে গভর্নর হন আব্দুর রউফ তালুকদার। তার শাসনামলে ব্যাংক খাত আরও সংকটে পড়ে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তার সময়ে অর্থনীতিতে তারল্য সংকট দেখা দেয়, ঋণখেলাপির পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে যায় এবং ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া, অতিরিক্ত টাকা ছাপানোর নীতির ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, যা সাধারণ মানুষের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই তিন গভর্নরের সময়কালে নেওয়া কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং তদারকির অভাবই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ।
ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে স্বচ্ছ ও কার্যকর নীতি প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসআর
মন্তব্য করুন: