দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে চামড়া ও পাট শিল্পের উদ্যোক্তা মো. ফিরোজ আহমেদের ভাষায়, অর্থায়ন সংকট এবং উচ্চ সুদের চাপের কারণে তার দুইটি রপ্তানিমুখী কারখানা প্রায় অচল। খুলনার ফুলতলায় অবস্থিত সুপার জুট মিলস ও সুপারেক্স লেদার নামের দুটি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মাত্র ২৫% ও ১০% সক্ষমতায় কাজ চালাচ্ছে।
ফিরোজ আহমেদের তথ্য অনুযায়ী, তার দুই কারখানার ঋণের পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে, যার দৈনিক সুদই প্রায় ৩০ লাখ টাকা। অথচ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় দৈনিক আয় মাত্র ৫-৭ লাখ টাকা।
ফলে ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়ছে। প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পেলে কারখানা দুটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা আড়াই হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সংকটের কারণ হবে।
তিনি বলেন, "দেশে পাট ও চামড়ার কাঁচামাল আছে, বিদেশি বাজারও আছে, কিন্তু ঋণের অভাবে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যদি এই সংকটের সমাধান না করে, তাহলে বড় শিল্পে বিনিয়োগ করতে আর কেউ সাহস করবে না।"
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেন, "ব্যবসায়ীদের অবস্থা খুবই কঠিন।
ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদেশি ক্রেতারা আরও কম মূল্যে পণ্য চাইছেন, অন্যদিকে ভারতীয় প্রতিযোগিতার কারণে গার্মেন্টস শিল্পও চাপে রয়েছে।"
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, দেশে বিনিয়োগে স্থবিরতা দীর্ঘদিন ধরে চলমান।
ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ জিডিপির ২৩.৫% থাকলেও বিদেশি বিনিয়োগ কমে মাত্র ০.৩%-এ নেমে এসেছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ঘুষ-দুর্নীতি, উচ্চ সুদের হার ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা বিনিয়োগের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, "বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিনিয়োগ করতে চান না। নির্বাচনকে ঘিরে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ নেই অনেকের। বিনিয়োগ স্থবির হলে কর্মসংস্থানও ব্যাহত হয়।"
সিপিডির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে ১৭টি সমস্যার মধ্যে দুর্নীতি প্রধান অন্তরায়। ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রে তাদের সমস্যাগুলো প্রকাশ্যে বলতে ভয় পান, কারণ এতে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এসআর
মন্তব্য করুন: