[email protected] শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
৫ বৈশাখ ১৪৩২

দুর্বল ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা মানসিক চাপের মধ্যে বিপর্যস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১:৪৬ পিএম

ফাইল ছবি

তারল্য সংকটে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা যেভাবে চাপের মধ্যে কাজ করছেন, তা তাদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

এসব ব্যাংকের শাখা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গ্রাহকরাও এই সংকটের শিকার হচ্ছেন। ব্যাংকের গ্রাহকরা প্রয়োজনীয় টাকা তুলতে না পারায় চাপের মধ্যে রয়েছেন, আর কর্মকর্তারা গ্রাহকদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় মানসিক ও শারীরিক চাপের শিকার হচ্ছেন।

এক ব্যাংক কর্মকর্তা ফেসবুকে লিখেছেন, "দুর্বল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কতটা মানসিক চাপের মধ্যে কাজ করছেন, তা অন্য ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কল্পনাতেও আসতে পারে না।" তিনি আরও জানান, ব্যাংকাররা নানা ধরনের চাপের মধ্যে থাকেন, যার কারণে তারা স্ট্রোকসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই চাপ এখন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, এবং এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তিনি বলেন, "এই ব্যাংকগুলো কবে স্বাভাবিক লেনদেন চালু করতে পারবে, তা ভবিষ্যৎই জানবে।"

ন্যাশনাল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "এখন ব্যবসায়ীদের টাকা আমরা দিচ্ছি, রেমিট্যান্সের টাকাও দিচ্ছি। তবে অসুস্থদের টাকা ও এফডিআরের টাকা আমরা অল্প অল্প করে দিচ্ছি। কিন্তু যারা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে পুরো টাকা তুলতে চান, তাদের সম্পূর্ণ টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। গ্রাহকদের চাপই এখন সবচেয়ে বেশি সামলাতে হচ্ছে।" তিনি আরও জানান, "কিছুদিন আগে এক গ্রাহক পুরো টাকা না পেয়ে আমাদের ওপর হাত তোলেন। এসব পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আমাদের জন্য মাথা ঠিক রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।"

বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি এসব দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। তবে তাও পরিস্থিতি পর্যাপ্ত উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়নি। এখনো গ্রাহকরা প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা তুলতে পারছেন না। অনেক গ্রাহক অভিযোগ করছেন, জরুরি প্রয়োজনেও তারা তাদের আমানত ফিরিয়ে পাচ্ছেন না, এমনকি মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। এর ফলে তারা বড় ধরনের চাপে পড়ছেন।

ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহক বেলাল হোসেন বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংকের তারল্য সহায়তার খবর পেয়ে গত রোববার ব্যাংকের উত্তরা শাখায় গিয়ে দুপুরের পর আসতে বলা হয়, কিন্তু দুপুরে গিয়ে জানানো হয়, তাদের শাখায় কোনো টাকা আসেনি। পরে আরও কয়েকবার যাওয়ার পরও একই কথা বলা হয়। তারা বলছে, 'পরের সপ্তাহে আসুন, টাকা পেলেই দিতে পারব।' এমন পরিস্থিতিতে আমি খুবই হতাশ। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার টাকা করে তুলতে পারলেও এখন সেটা দেওয়া হচ্ছে না। আমার মতো হাজার হাজার গ্রাহক হয়রানির শিকার হচ্ছেন।"

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা সব সময় গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করি। তবে এখন গ্রাহকদের রাগ ও ক্ষোভ বেড়েছে, যা আমার চাকরি জীবনে আগে কখনও দেখিনি। অনেকেই মারমুখী আচরণ করেন, যেন আমি তাদের টাকা মেরে নিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা মাথা ঠাণ্ডা রেখে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। কিন্তু দুঃখ লাগে যে, এত ভালো ব্যাংক কীভাবে এত খারাপ হয়ে গেল।"

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন বলেন, "বাংলাদেশ ব্যাংক যখন এসব দুর্বল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে, তখন গ্রাহকরা টাকা উত্তোলন করতে পারছিলেন। কিন্তু বর্তমানে, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া অর্থ সহায়তার পর, পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে। এখন তারা গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা দিতে পারছেন। তবে যারা অপ্রয়োজনে টাকা তুলতে চান, তাদের রুখে দিতে পারছেন। এই পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে এবং আশা করা যাচ্ছে, গ্রাহকরা আবার এই ব্যাংকগুলোতে ফিরতে পারবেন।"

এই সংকটের মধ্যে ব্যাংক কর্মকর্তারা এবং গ্রাহকেরা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন, তবে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কিছু আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর