[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ২ জানুয়ারি ২০২৫
১৯ পৌষ ১৪৩১

চলতি বাজেটে ৫৩ হাজার কোটি টাকার ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:৪৩ এএম

ফাইল  ছবি

দেশের অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, যার কারণে সরকার চলতি বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রাজস্ব আহরণ প্রত্যাশিত মাত্রায় না হওয়ায় এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মন্থরগতি দেখা দেওয়ার কারণে বাজেট সংশোধন করা হয়েছে। এতে সরকারের খরচ কমানোর পাশাপাশি কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়নও স্থগিত করা হয়েছে।

অর্থবছরের শুরু থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ফলে, বর্তমান বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের বৈঠকে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব এবং আর্থিক বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করলেও, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার তা কেটে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে, যার প্রভাব দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পড়বে। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে রাজস্ব আহরণও কমেছে, ফলে সরকার বাজেট কাটছাঁট করতে বাধ্য হয়েছে।

সরকারের আয়-ব্যয় পর্যালোচনার পর চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এনবিআরের কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, করবহির্ভূত আয় ৪৬ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। এই কমতির প্রধান কারণ হিসেবে জুলাই ও আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, মূল্যস্ফীতি, আমদানিতে ধীরগতি এবং নিত্যপণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় উল্লেখ করা হয়েছে।

এনবিআরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ লাখ ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা কমেছে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এটি ৩০ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা কম। অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় অর্থনীতি সংকুচিত হচ্ছে, ফলে উন্নয়ন বাজেট কমানো হচ্ছে। প্রথমে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট নির্ধারণ করা হলেও, এখন তা ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে।

এদিকে, সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়ার সুযোগ সীমিত এবং বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি আগের তুলনায় কমে গেছে, যার ফলে সরকারকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তবে, খাদ্য ভর্তুকি হ্রাস না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, কারণ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় কিছুটা বাড়ছে, তবে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ চলতে থাকবে।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ, যানবাহন ক্রয় এবং নতুন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ, পেট্রোল, অয়েল লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাসের মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ ব্যয়ও স্থগিত রাখা হবে।

দেশের অর্থনীতি গত তিন বছরে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা উন্নতি লাভ করলেও, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ কারণে সরকার কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যাতে সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।

 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর