রাজধানীর উত্তরা এলাকায় নগদ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে র্যাব পরিচয়ে ডকাতির তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে এবং নগদ অর্থ ও গাড়িসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এবং নগদ অর্থ ও গাড়িসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে বুধবার ১৮ জুন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
তারা হলো- মোঃ হাসান (৩৫), গোলাম মোস্তফা ওরফে শাহিন (৫০), শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন ওরফে রবিউল (৪৩), মোঃ ইমদাদুল শরীফ (২৮) ও মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপন (২৭)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্এারে প্রেস ব্রিফিং করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির উত্তরা বিভাগের ডিসি মোঃ মহিদুল ইসলাম বিপিএম।
উত্তরা পশ্চিম থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ জুন সকাল প্রায় ৯টার দিকে নগদের ডিস্ট্রিবিউটর আব্দুল খালেক নয়ন তার উত্তরার ১২ নং রোডের ৩৭ নং বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানের চারজন কর্মচারীসহ চারটি ব্যাগে ১ কোটি ৮ লক্ষ ১১ হাজার টাকা নিয়ে দুটি মোটরসাইকেল যোগে উত্তরার নগদের অফিসের উদ্দেশে রওনা হয়।
পথিমধ্যে উত্তরা ১২ ও ১৩ নং রোডের সংযোগস্থলে একটি কালো রঙের হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের গতিরোধ করে। মাইক্রোবাস থেকে ‘র্যাব’ লেখা কালো কটি পরা মুখে কালো কাপড় বাঁধা ৬/৭ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি হাতে অস্ত্র নিয়ে নগদের টাকা বহনকারী কর্মচারীদের চারটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের তিনজনকে মাইক্রোবাসে তুলে হাত-চোখ বেঁধে মারধর করে।
ঘটনাস্থল থেকে ১জন কর্মচারী পালিয়ে যায়। পরে ডাকাতরা ৩ জনকে তুরাগ থানার ১৭ নং সেক্টরের বৃন্দাবন এলাকায় ফেলে রেখে টাকা, দুটি অফিসিয়াল মোবাইল ফোন ও তিনটি ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ভূক্তভোগী আব্দুর রহমান উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা রুজু করে।
থানা সূত্র জানায়, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর উত্তরা বিভাগ ও ডিবি ঘটনার রহস্য উদঘাটন, আসামি গ্রেফতার ও লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারে তৎক্ষণাৎ কাজ শুরু করে।
উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে উত্তরা বিভাগের এডিসি, এসি, অফিসার ইনচার্জসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে একটি চৌকস দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাস ও চালককে সনাক্ত করে বুধবার রাত পৌনে ২টায় খিলগাঁও এলাকা থেকে মাইক্রোবাসের চালক মোঃ হাসানকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানার একটি টিম।
এ সময় তার হেফাজত হতে নকল একটি নেমপ্লেট ও নগদ ৮ হাজার ৫'শ টাকা উদ্ধার করে। তার তথ্যের ভিত্তিতে সবুজবাগ থানার মাদারটেক চৌরাস্তার স্বপন মিয়ার গ্যারেজ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
ডিবি উত্তরা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি টিম ঘটনাস্থলসহ আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে।
পরবর্তীতে ডাকাত চক্রের মূলহোতা গোলাম মোস্তফা ঘরামী ওরফে শাহিনকে বুধবার ১৮ জুন রাত পৌনে ১১টায় ঢাকার উত্তরা এলাকা হতে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে লুণ্ঠিত ১৩ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫'শ টাকা উদ্ধার করে তার তথ্যমতে মোঃ ইমদাদুল শরীফকে রাত পৌনে ১২টায় আদাবর থানার বায়তুল আমান হাউজিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে লুন্ঠিত ৮ লক্ষ ৪ হাজার ৭'শ ৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত শাহিন ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট শেখ মোঃ জালাল উদ্দিনকে একই দিন রাতে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৬৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জালাল নিজেকে ক্যাপ্টেন জালাল হিসেবে নিজেকে পরিচয় প্রদান করে। জালাল ঘটনার পরদিন লুন্ঠিত ১২ লক্ষ টাকা ঢাকা ব্যাংকের নিজ নামীয় একাউন্টে জমা করে। উক্ত টাকা জব্দের ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন আছে।
ডিবি সূত্র আরও জানায়, গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাত চক্রের অপর সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে শিপনকে বুধবার রাতে এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে র্যাব ও পুলিশের নকল আইডি কার্ড, লাঠি, সিগনাল লাইট, সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত মানিব্যাগ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
থানা ও ডিবি সূত্রে জানা যায়, ডাকাত দলের দলনেতা মোস্তফা ওরফে শাহিন একজন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং শেখ মোঃ জালাল উদ্দিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট। এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে র্যাব ও পুলিশের পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছে মর্মে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারসহ অবশিষ্ট টাকা উদ্ধারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: