রাজধানী ঢাকায় ছিনতাই অপরাধ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
নগরীর ৫০টি থানা এলাকায় ছিনতাইকারীদের সক্রিয়তা চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে ৪৩২টি হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে। এ
সব এলাকায় প্রায় ১,২০০ ছিনতাইকারী সক্রিয়ভাবে অপরাধ সংঘটিত করছে।
অপরাধের ধরন ও বিস্তার
প্রতিদিনই ছিনতাইকারীদের হাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চলন্ত বাস, প্রাইভেট কার থেকে মোবাইল ফোন, গলার চেইন, কানের দুল ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
রাস্তায় প্রকাশ্যে ছুরি, চাকু বা পিস্তল দেখিয়ে নগদ অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হচ্ছে। বাধা দিলেই আঘাত করা হচ্ছে, যার ফলে গুরুতর আহত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে।
ছিনতাইকারীদের ধরন
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে ছিনতাইকারীদের তিনটি গ্রুপ চিহ্নিত করা হয়েছে— ১. পেশাদার ছিনতাইকারী: সংঘবদ্ধ দল, যাদের প্রত্যেকটি গ্রুপে ৪-৫ জন সদস্য থাকে। 2. মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী: মাদকের টাকা জোগাড় করতে অপরাধে লিপ্ত হয়। 3. শৌখিন ছিনতাইকারী: উচ্চবিত্ত পরিবারের কিছু যুবক, যারা শখের বসে ছিনতাই করে।
বিভাগভিত্তিক হটস্পট
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইয়ের প্রধান কেন্দ্রগুলো হলো—
সাম্প্রতিক ঘটনা ও প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি বনশ্রীতে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে স্বর্ণ লুটের ঘটনা, আদাবর ও মোহাম্মদপুরে পৃথক ছিনতাই, এবং উত্তরায় দুই ছিনতাইকারীকে জনতা ধরে ফেলে গণধোলাই দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এতে জনমনে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি বৈঠকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কম্বাইন্ড অপারেশন শুরু করেছে। পুলিশ, র্যাব, এটিইউ এবং সিটিটিসি যৌথভাবে ছিনতাই দমনে অভিযান পরিচালনা করছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌহিদুল হক বলেন, "অপরাধীদের ধরতে পুলিশকে কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।" অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম নাজমুস সাকিব বলেন, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠন না করা হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে।"
পুলিশের বক্তব্য
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, "আমাদের মূল কাজ ছিনতাইকারীদের দমন করা।" পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, "কোনো নির্দিষ্ট স্পট নয়, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতেই অভিযান চালানো হচ্ছে।"
নাগরিকদের করণীয়
নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যার পর একা চলাচল এড়িয়ে চলা, চলন্ত বাস বা গাড়িতে জানালা খোলা না রাখা এবং অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সাবধান থাকা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতা ও সতর্কতাও অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি বেশ তথ্যবহুল এবং গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে আরও কিছু উন্নতির সুযোগ আছে:
এসআর
মন্তব্য করুন: