[email protected] বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
৩ বৈশাখ ১৪৩২

ঢাকায় গণপরিবহণ সংকট চরমে, দুর্ভোগে যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:০৫ পিএম

ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহণ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে, ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী ও সাধারণ যাত্রীরা।

গত কয়েকদিন ধরেই এই সংকট চলছে, যা বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আরও প্রকট হয়।

বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা, নেই পরিবহণ

সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, আব্দুল্লাহপুর, কুড়িল, বসুন্ধরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, কাকরাইল এবং পল্টনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু বাসের দেখা নেই। হাতে গোনা কিছু বাস চললেও সেগুলোর দরজা বন্ধ এবং যাত্রীতে পরিপূর্ণ, ফলে ওঠার সুযোগ নেই। অনেকেই বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিএনজি, রিকশা বা রাইড শেয়ারিং বাইকে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

বাস চলাচল বন্ধ কেন?

বাড্ডা ও রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সারি সারি বাস পার্ক করা থাকতে দেখা গেছে, কিন্তু সেগুলো সড়কে নামেনি। ভিক্টর পরিবহণের এক হেলপার জানান, "নতুন নিয়ম অনুযায়ী বাসগুলো গোলাপি রঙ করতে হবে, তাই অনেক বাস মালিক রাস্তায় বাস নামাননি। এছাড়া ই-টিকিটিং চালু হলে ড্রাইভার ও হেলপারদের আয় কমে যাবে, এই আশঙ্কায় অনেকেই গাড়ি বের করেননি।"

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২১টি কোম্পানির ২,৬১০টি বাস গোলাপি রঙ করে ই-টিকিটিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই কিছু বাস মালিক ও শ্রমিকদের অসহযোগিতার কারণে বাস সংকট তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভোগান্তিতে সাধারণ যাত্রীরা

কুড়িল বিশ্বরোড মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, "দীর্ঘক্ষণ ধরে বাসের অপেক্ষা করছি, কিন্তু বাস নেই। যে ক’টি বাস আসছে, সেগুলোতে ওঠার কোনো উপায় নেই। ফলে বাধ্য হয়ে রাইড শেয়ারিং নিতে হচ্ছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয়বহুল।"

একইভাবে, যমুনা ফিউচার পার্কগামী নিরব হিলাল বলেন, "বাস সংকটের ফলে রিকশা, সিএনজি ও বাইক রাইডাররা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এই সংকট পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।"

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও নতুন চ্যালেঞ্জ

বাস কম থাকায় ঢাকার বিভিন্ন রুটে রিকশা, সিএনজি ও বাইকের সংখ্যা বেড়েছে, যার ফলে যানজট আরও তীব্র হয়েছে। মালিবাগ ও মৌচাক এলাকার এক যাত্রী জানান, "বাস সংকটের কারণে অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, আবার যারা গাড়িতে উঠেছেন, তারা যানজটে আটকে আছেন।"

ট্রাফিক বিভাগের উত্তরা জোনের সহকারী ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) ফজলুল করিম বলেন, "বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হচ্ছে, রঙ পরিবর্তন ও ই-টিকিটিং ব্যবস্থার কারণে বাস মালিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবহণ সংকট তৈরি করেছেন।"

বাড্ডা ট্রাফিক জোনের সহকারী কমিশনার শারমিন আক্তার জানান, "গোলাপি রঙ করার পাশাপাশি কিছু বাসের ড্রাইভার-হেলপার ধর্মঘট করেছে বলে জানা গেছে। ফলে সড়কে বাসের সংখ্যা কমে গেছে।"

সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংকট দ্রুত সমাধান না হলে যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়বে। একই সঙ্গে সরকারের কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন, যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবণতা বন্ধ হয়।

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বাস মালিক ও শ্রমিকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা না গেলে রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর