নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. লাক মিয়ার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
চাল, গম ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের হদিস পাওয়া গেছে।
দুদকের অনুসন্ধানে এরই মধ্যে সাড়ে ৪০০ বিঘার ওপর জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার দুদকের অনুসন্ধানকারী টিম কমিশনে ৭০টি দলিলমূলে প্রায় ১৭০ বিঘা জমি ক্রোকের আবেদন করেছে।
কমিশন অনুমোদন দিলে শিগগিরই আদালতে ওই জমিগুলো ক্রোকের আবেদন করা হবে।
এ ছাড়া আরো ১৬০টি দলিলমূলে ৩০০ বিঘার ওপর জমির তথ্য দুদকের হাতে এসেছে। এসব জমিও ক্রোকের জন্য আবেদন তৈরি করা হচ্ছে।
বাড্ডা, খিলক্ষেতসহ রাজধানীতে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্রায় ১৫০ কাঠা জমি রয়েছে।
এ ছাড়া লাক মিয়া ও তাঁর সম্পৃক্তদের শতাধিক ব্যাংক হিসাবে ২০ হাজার কোটি টাকার ওপর লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। আয়কর নথিতে তাঁর এসব জমি ও অর্থ-সম্পদের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
শুধু তা-ই নয়, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের নোটিশ পাওয়ার পর তিনি ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকাও তুলে নিয়েছেন। দুদক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, লাক মিয়ার বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদের চাল, গম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ছিল।
কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তাঁর হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য। এরই মধ্যে তাঁর প্রায় ১৭০ বিঘা জমি ক্রোকের জন্য কমিশনে আবেদন করা হয়েছে।
এসব জমির দলিলমূল্য ৪৫ কোটি টাকা হলেও প্রকৃত দাম অনেক বেশি। আরো ৩০০ বিঘার ওপর জমি ক্রোকের আবেদনও তৈরি করা হচ্ছে।
আইন পাশ কাটিয়ে এসব জমির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই হেবা বিল এওয়াজ (প্রতীকী কোনো প্রতিদানের বিনিময়ে কোনো সম্পত্তির দান) দলিলের মাধ্যমে কেনা হয়েছে।
শতাধিক অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন : প্রিমিয়াম ব্যাংক কালিবাড়ি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক মাধবদী, সাউথ ইস্ট ব্যাংক ভুলতা, ঢাকা ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক কালিবাড়ি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক বাবুরহাট, এবি ব্যাংক ইসলামপুর, এবি ব্যাংক ভুলতা, ওয়ান ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ, পূবালী ব্যাংক দুবতারা শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অর্থ হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করা হয়েছে।
পরিবারসহ বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা : লাক মিয়া ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা বেগম, সন্তান মিনজু আক্তার ও হাফসা আক্তারের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছে দুদক।
আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন তা মঞ্জুর করেন এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
এসব বিষয়ে জানতে লাক মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র- কালের কন্ঠ।
এসআর
মন্তব্য করুন: