রাজধানীর হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনে ড্রাম থেকে রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারের ঘটনার মূলহোতা জরেজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাইকোর্টসংলগ্ন ফুটপাতে রাখা নীল রঙের দুটি ড্রাম থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেন। ড্রাম খুলে একটিতে চাল এবং অন্যটিতে হাত–পা–মাথাসহ মোট ২৬ টুকরা খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহ কালো পলিথিনে মোড়ানো ছিল এবং প্রাথমিক ধারণা, দুই–এক দিন আগে হত্যার পর লাশ কেটে ড্রামে ভরা হয়।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিহতের পরিচয় মেলে—তিনি রংপুর বদরগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল হক (৩৫)। পেঁয়াজ, রসুন, মরিচসহ বিভিন্ন কাঁচামালের ব্যবসা করতেন তিনি। স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বাবা-মা রয়েছেন তার।
নিহতের বোন আনজিরা বেগম শুক্রবার শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আশরাফুলের শৈশবের বন্ধু জরেজ (জরেজুল ইসলাম)–কে। আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুর।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আশরাফুল ও জরেজ ছোটবেলার বন্ধু। আগে তারা যৌথ ব্যবসা করলেও তিন–চার বছর আগে জরেজ মালয়েশিয়া চলে যান। এক মাস আগে দেশে ফিরে তিনি জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন এবং এ জন্য আশরাফুলের কাছ থেকে টাকা ধার চান। আশরাফুল তাকে টাকা দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন।
গত মঙ্গলবার রংপুরের প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অসুস্থ বাবাকে দেখতে গিয়ে আশরাফুল জরেজকে সঙ্গে নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এরপর থেকেই তিনি আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
আশরাফুলের স্ত্রী লাকি বেগমের বারবার ফোন করেও সাড়া মিলছিল না। পরে তিনি জরেজের বাড়িতে গেলে জরেজের স্ত্রী জানান, দুজনই নাকি একসঙ্গে আছেন। কিছুক্ষণ পর লাকির ফোনে জরেজ কল ধরে বলেন, “ফোনটা আমার কাছে আছে, আশরাফুল বাইরে গেছে।” তবে কোথায় গেছেন জানতে পারেননি বলে জানান তিনি।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই জাতীয় ঈদগাহের সামনে ড্রাম থেকে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার হয়। পরে আত্মীয়রা ছবির মাধ্যমে মরদেহ শনাক্ত করেন।
গ্রেপ্তারের পর জরেজুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। হত্যাকাণ্ডে আরও কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসআর
মন্তব্য করুন: