[email protected] বৃহঃস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
১৫ কার্তিক ১৪৩২

এবার সঞ্চয়পত্রের সার্ভার হ্যাক করে গ্রাহকের ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলো জালিয়াত চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ ৪:৫২ এএম

সংগৃহীত ছবি

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের (এনএসসি) অনলাইন সিস্টেমে প্রবেশ করে জালিয়াতির মাধ্যমে ২৫ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেজবাহ উদ্দিন বুধবার (২৯ অক্টোবর) বলেন, “ঘটনার বিষয়ে একটি জিডি হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি, তবে আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছি।”

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর এক গ্রাহক ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন। তার ব্যাংক হিসাব ছিল অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেস ক্লাব শাখায়। কিন্তু মাত্র চার দিন পর, ওই সঞ্চয়পত্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হয় এবং টাকা স্থানান্তর করা হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখার এক অজ্ঞাত ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। পরদিন শ্যামলী শাখা থেকে পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়।

একই কৌশলে একই দিনে আরও দুটি সঞ্চয়পত্র (৩০ লাখ ও ২০ লাখ টাকার) ভাঙানোর চেষ্টা হয়—একটি ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, অন্যটি এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসায় ওই দুটি জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হয়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, গ্রাহকেরা কেউই সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর আবেদন করেননি; এমনকি তাদের মোবাইল ফোনে কোনো ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি)ও যায়নি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যেসব কর্মকর্তার কাছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পাসওয়ার্ড ছিল, তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে—এই জালিয়াতিতে পাসওয়ার্ড ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে যাদের কাছে পাসওয়ার্ড ছিল, তারা নজরদারিতে রয়েছেন। একই সঙ্গে বাইরের কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সার্ভার থেকেই এই জালিয়াতি হয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ, সার্ভার হ্যাকের মাধ্যমে তথ্য পরিবর্তনের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭১ কোটি টাকা।

সারা দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিসের প্রায় ১২ হাজার শাখা থেকে এসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও ভাঙানো হয়। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকেই এ ধরনের জালিয়াতির ঘটনা শনাক্ত হয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদুল আলম খান বলেন, “ঘটনার পর আমরা ডিএমডির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটি কাজ শুরু করেছে, দ্রুতই বিস্তারিত জানা যাবে।”

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর আবেদন শুধুমাত্র ক্রয়ের অফিসেই করতে হয় এবং ওটিপি যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই এই ঘটনার পেছনে অভ্যন্তরীণ সহায়তা ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। 

এসআর

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর